মঙ্গল. সেপ্টে ২৪, ২০২৪

শ্রদ্ধা-ভালোবাসায় চিরশায়িত লেফটেন্যান্ট নির্জন

কক্সবাজারের চকরিয়ায় যৌথবাহিনীর অভিযান পরিচালনা করার সময় সন্ত্রাসীদের হামলায় নিহত সেনা অফিসার লেফটেন্যান্ট তানজিম ছরোয়ার নির্জনের দাফন সম্পন্ন হয়েছে।

মঙ্গলবার সন্ধ্যায় টাঙ্গাইল সদর উপজেলার বোয়ালী মাদ্রাসা মাঠে জানাজা শেষে স্থানীয় কবরস্থানে তাকে দাফন করা হয়।  

এর আগে সেনাবাহিনীর পক্ষ থেকে নিহত নির্জনকে গার্ড অব অনার দেওয়া হয়। জানাজা নামাজে পরিবারের সদস্য, সেনাবাহিনীর বিভিন্ন পর্যায়ের সদস্য ছাড়াও স্থানীয় জনগণ অংশ নেন।

এর আগে বিকাল সাড়ে ৩টার দিকে হেলিকপ্টারযোগে নিহত নির্জনের লাশ ডিস্ট্রিক গেইট এলাকার হেলিপ্যাডে পৌঁছায়। সেখান থেকে সেনাবাহিনীর তত্ত্বাবধানে লাশ গ্রামের বাড়িতে নিয়ে যাওয়া হয়।  

জানা গেছে, নিহত তানজিম ছরোয়ার নির্জনের বাবার নাম ছরোয়ার জাহান ও মায়ের নাম নাজমা বেগম। তিনি ছিলেন এই দম্পতির একমাত্র ছেলে।

তার বাড়ি টাঙ্গাইল সদর উপজেলার করটিয়া ইউনিয়নের করের বেতকা গ্রামে। তার মৃত্যুতে বাড়িতে চলছে শোকের মাতম। মা, পরিবারের অন্য সদস্য, স্বজন, বন্ধুবান্ধব ও এলাকাবাসীরা কান্নায় ভেঙে পড়ছেন। পরিবারের সদস্যদের সান্তনা দিতে তার বাড়িতে ছুটে এসেছেন সেনাবাহিনীর ঊর্ধতন কর্মকর্তারা।

নিহত সেনা কর্মকর্তার মা ও স্বজনরা জানান, পাবনা ক্যাডেট কলেজ হতে উচ্চ মাধ্যমিক সমাপন করে ৮২তম দীর্ঘমেয়াদি কোর্সের সাথে বাংলাদেশ মিলিটারি একাডেমি হতে গত ২০২২ সালের ৮ জুন আর্মি সার্ভিস কোরে (এএসসি) কমিশন লাভ করেন তানজিম ছরোয়ার নির্জন। পরিবারের লোকজন সেনা কর্মকর্তা নির্জনের হত্যায় জড়িতদের গ্রেফতার ও বিচার দাবি করেছেন।

নিহত সেনা কর্মকর্তার বোন তাসনুভা ছরোয়ার সূচি বলেন, আমার ভাই ডিসেম্বর মাসে ক্যাপ্টেন পদে পদন্নোতি পেত, সেজন্য সে ভালোভাবে কাজ শুরু করেছিলো। আমরা আগামী বছর বিয়ে করানোর জন্যও পাত্রী দেখা শুরু করেছিলাম। গতকাল (সোমবার) ফোন করে আমাকে বললো যে, আপু আমাকে পিঠা খাওয়াবা কবে, আমি মাংস পিঠা খাব।

আর পিঠা খাওয়াতে পারলাম না আমার ভাইটাকে। আমার ভাই বললো- আপু আমি একটি অভিযানে যাচ্ছি, দোয়া কইরো, অভিযান শেষ করে আমি নিরাপদ জায়গায় গিয়ে কল দিবোনি, চিন্তা কইরোনা। ভাই আমার আর কল দিলো না।

নির্জনের মা বলেন, আমার ছেলে রাতে কল দিয়ে বললো মা আমি অভিযানে যাচ্ছি দোয়া কইরো, শেষ করে তারপর কল দিবোনি, আমার ছেলে আর কল দিলো না, আমার ছেলে হত্যার বিচার দাবি করছি।

নির্জনের বাবা ছরোয়ার জাহান বলেন, সকালে কল আসে নির্জন মারা গেছে। আমি বিশ্বাস করতেই পারছিলাম না। কী থেকে কী হয়ে গেল। দেশের জন্য আমার ছেলে জীবন দিয়েছে। আমি আমার ছেলের হত্যাকারীদের বিচার দাবি করছি। আমার সংসারে একমাত্র উপার্জনের মানুষ ছিলো আমার ছেলে, সেও এখন হারিয়ে গেলো।

জানা গেছে, সোমবার দিবাগত রাত ৩টার দিকে গোয়েন্দা তথ্যের ভিত্তিতে চকরিয়া উপজেলার অন্তর্গত ডুলহাজারা ইউনিয়নের পূর্ব মাইজপাড়া গ্রামে ডাকাতির খবর পেয়ে চকরিয়া আর্মি ক্যাম্প থেকে বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর একটি দল দ্রুততার সাথে গমন করে। আনুমানিক ৪টার দিকে মাইজপাড়া গ্রামে অভিযান পরিচালনা করার সময় ৭/৮ সদস্যের একটি ডাকাত দল সেনা টহল দলের উপস্থিতি টের পেয়ে অন্যত্র পালিয়ে যাওয়ার সময় লেফটেন্যান্ট তানজিম ছরোয়ার নির্জন (২৩) ডাকাত দলের কয়েকজনকে তাড়া করেন। এসময় ডাকাত দলের সদস্যরা লেফটেন্যান্ট তানজিম ছরোয়ার নির্জনের ঘাড়ে ছুরিকাঘাত করলে তিনি গুরুতর আহত হন। এতে তার প্রচুর রক্তক্ষরণ শুরু হয়। তাৎক্ষণিকভাবে লেফটেন্যান্ট তাকে উদ্ধার করে মালুমঘাট মেমোরিয়াল হাসপাতালে নেওয়া হলে কর্তব্যরত চিকিৎসক তাকে মৃত ঘোষণা করেন।

By admin

Related Post

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *