শনি. সেপ্টে ২১, ২০২৪

ভারী বৃষ্টিতে ঢাকায় ডুবল সড়ক-অলিগলি

ভোর থেকেই শুরু হয় মুষলধারে বৃষ্টি। রাজধানীবাসী তখনও ঘুমে। ছুটির দিনে ঝুমবৃষ্টির শব্দে অনেকের ঘুম ভাঙে, আবার অনেকে আরেকটু ঘুমানোর প্রস্তুতি নেয়। কিন্তু কর্মজীবী বহু মানুষকে বের হতে হয়েছে বৃষ্টি উপেক্ষা করেই। এতে ভিজে এবং পানি জমা অলিগলি ও সড়কে নাকাল হতে হয়েছে তাদের।

শুক্রবার (১২ জুলাই) সকাল ৬টা থেকে ঢাকায় এই বৃষ্টি নামে। ইতোমধ্যে বেশির ভাগ এলাকার সড়ক ও অলিগলিতে পানি জমে একাকার। এতে দুর্ভোগ বেড়েছে শ্রমিক, দিনমজুর ও ক্ষুদ্র ব্যবসায়ীদের।

আজ ভারী বৃষ্টির কারণে অল্প সময়ের ডুবে যায় রাজধানীর বহু এলাকা। এর মধ্যে মগবাজার, মালিবাগ, মৌচাক, শাহজাহানপুর, নাখালপাড়া, পশ্চিম তেজতুরী বাজার, তেজকুনি পাড়া, রাজাবাজার, কারওয়ান বাজার, ধানমন্ডিসহ, পশ্চিম শ্যাওড়াপাড়াসহ রাজধানীর বিভিন্ন এলাকার রাস্তায় পানি জমে গেছে। কোথাও হাঁটুপানি, কোথাও কোমরসমান। এতে পথচারীদের দুর্ভোগের যেন অন্ত নেই।

এমনিতেই রাজধানীতে ছুটির দিনে থাকে সরকারি বিভিন্ন নিয়োগ পরীক্ষা। আজও ১৮তম শিক্ষক নিবন্ধনের লিখিত পরীক্ষা রয়েছে। এই বৃষ্টিতে বেশ বিপাকে পড়েছেন পরীক্ষায় অংশ নেওয়া চাকরিপ্রার্থীরা। তাদের অনেককে কাকভেজা হয়ে আসতে হয়েছে পরীক্ষা কেন্দ্রে। ছাতা দিয়ে কোনও রকম প্রবেশপত্র রক্ষা করলেও ভিজেছে সারা শরীর।

আবহাওয়া অধিদফতর জানিয়েছে, আজ সারা দিনই থেমে থেমে রাজধানীতে ঝরতে পারে এই বৃষ্টি। শুক্রবার ভোর ছয়টা থেকে সকাল ৯টায় পর্যন্ত তিন ঘণ্টায় ঢাকায় বৃষ্টি হয়েছে ৬০ মিলিমিটার। আর দেশে সর্বোচ্চ বৃষ্টি হয়েছে কক্সবাজারে ৩০৯ মিলিমিটার।

আবহাওয়া অধিদফতরের বৃহস্পতিবার সন্ধ্যা ছয়টা থেকে পরবর্তী ২৪ ঘণ্টার পূর্বাভাসে বলা হয়, রংপুর বিভাগের অধিকাংশ জায়গায়, রাজশাহী, ময়মনসিংহ, খুলনা, বরিশাল, চট্টগ্রাম ও সিলেট বিভাগের অনেক জায়গায় এবং ঢাকা বিভাগের কিছু কিছু জায়গায় অস্থায়ীভাবে দমকা হাওয়াসহ হালকা মাঝারি ধরনের বৃষ্টি অথবা বজ্রসহ বৃষ্টি হতে পারে। সারা দেশের কোথাও কোথাও মাঝারি ধরনের ভারী থেকে ভারী বর্ষণ হতে পারে।

শুক্রবার সন্ধ্যা ছয়টা থেকে পরবর্তী ২৪ ঘণ্টা পূর্বাভাসে বলা হয়, রংপুর বিভাগের অধিকাংশ জায়গায়। রাজশাহী, ময়মনসিংহ, চট্টগ্রাম ও সিলেট বিভাগের অনেক জায়গায় এবং ঢাকা, খুলনা ও বরিশাল বিভাগের কিছু কিছু জায়গায় অস্থায়ীভাবে দমকা হাওয়াসহ হালকা থেকে মাঝারি ধরনের বৃষ্টি অথবা বজ্রসহ বৃষ্টি হতে পারে। সেই সঙ্গে রংপুর, ময়মনসিংহ, চট্টগ্রাম ও সিলেট বিভাগের কোথাও কোথাও মাঝারি ধরনের ভারী থেকে ভারী বর্ষণ হতে পারে। সারা দেশে দিন ও রাতের তাপমাত্রা সামান্য বাড়তে পারে।

আবহাওয়াবিদ আবুল কালাম মল্লিক জানান, মৌসুমি বায়ুর অক্ষ পাঞ্জাব, হরিয়ানা, উত্তর প্রদেশ, বিহার, পশ্চিমবঙ্গ ও বাংলাদেশের উত্তরাঞ্চল হয়ে আসাম পর্যন্ত বিস্তৃত রয়েছে। এর একটি বর্ধিতাংশ উত্তর বঙ্গোপসাগর পর্যন্ত বিস্তৃত রয়েছে। মৌসুমি বায়ু বাংলাদেশের ওপর সক্রিয় এবং উত্তর বঙ্গোপসাগরে মাঝারি থেকে প্রবল অবস্থায় রয়েছে। এর প্রভাবেই সারা ঢাকায় বৃষ্টি হচ্ছে।

এদিকে সিলেট, চট্টগ্রাম, কক্সবাজার ও পার্বত্য চট্টগ্রামের পাহাড়ি এলাকাগুলোতে পাহাড়ধসের সতর্কবার্তা দেওয়া হয়েছে। পাহাড়ের নিচে ও আশপাশে বসবাসকারীদের নিরাপদ স্থানে আশ্রয় নেওয়ার জন্য বলা হয়েছে।

কক্সবাজারে ভারী বৃষ্টির কারণে অন্তত পাঁচটি এলাকায় পাহাড়ধসের ঘটনা ঘটেছে। এতে নারী ও শিশু মিলিয়ে মোট দুজন মারা গেছেন।

বৃহস্পতিবার ভোরের দিকে শহরের দক্ষিণ রুমালিয়ারছড়া এলাকায় বসতঘরে পাহাড়ধসে জমিলা বেগম নামে এক গৃহবধূ গুরুতর আহত হন। তাকে গুরুতর আহত অবস্থায় উদ্ধার করে জেলা সদর হাসপাতালে নেওয়া হয়। সকালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় তার মৃত্যু হয়। একই এলাকায় আরেকটি পাহাড়ধসে বাড়ির দেয়ালচাপায় হাসান নামে ১০ বছরের এক শিশু মারা যায়। হাসান স্থানীয় সাইফুল ইসলামের ছেলে।

সিলেটে ভারী বৃষ্টি শুরু হওয়ায় বন্যা পরিস্থিতির অবনতির আশঙ্কা করছে বন্যা পূর্বাভাস ও সতর্কীকরণ কেন্দ্র।

By admin

Related Post

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *