প্রেস বিজ্ঞপ্তি: আন্তর্জাতিক সিসা দূষণ প্রতিরোধ সপ্তাহ পালনে ইয়ুথনেট, পিওর আর্থ ও ইউনিসেফের র্যালি, মানববন্ধন ও আলোচনা সভার আয়োজন, ইয়ুথ লীড গ্লোবালের অংশগ্রহণ
২৬শে অক্টোবর ২০২৪, বাংলাদেশ – ‘সিসা দূষণ বন্ধ হলে, বাড়বে শিশু বুদ্ধি-বলে’ এই প্রতিপাদ্যকে সামনে রেখে “আন্তর্জাতিক সিসা দূষণ প্রতিরোধ সপ্তাহ (২০-২৬ অক্টোবর)” উপলক্ষে ইয়ুথনেট গ্লোবাল এবং পিওর আর্থ বাংলাদেশ যৌথভাবে নারায়ণগঞ্জ জেলায় জনসচেতনতামূলক র্যালি, মানববন্ধন ও আলোচনা সভার আয়োজন করে যা অনুষ্ঠিত হয় ইউনিসেফ-এর সহায়তায়। এতে ইয়ুথ লীড গ্লোবাল এর সদস্যরা অংশগ্রহণ করে।
র্যালিতে অর্ধশতাধিক মানুষ অংশ নেন যাদের মধ্যে ছিলেন ইয়ুথনেট গ্লোবালের স্বেচ্ছাসেবীরা, পিওর আর্থ বাংলাদেশ ও ইউনিসেফের প্রতিনিধিবৃন্দ, ইয়ুথ লীড গ্লোবাল এর সদস্য, সাধারণ মানুষ, বিভিন্ন যুব সংগঠন, সুশীল সমাজ সংগঠন ও স্থানীয় এনজিও প্রতিনিধি, পরিবেশ অধিদপ্তরসহ বিভিন্ন সরকারি প্রতিষ্ঠানের প্রতিনিধি, নীতিনির্ধারণী মহল, পরিবেশ অধিকারকর্মী, সমাজকর্মী, গণমাধ্যমকর্মীসহ সমাজের বিভিন্ন পর্যায়ের ব্যক্তিবর্গ।
র্যালিটি সকাল ১১টায় নারায়ণগঞ্জ চাষাড়া কেন্দ্রীয় শহীদ মিনার থেকে শুরু করে বালুর মাঠ এলাকা প্রদক্ষিণ করে শহীদ মিনারে মানববন্ধন তৈরির মাধ্যমে দুপুর ১২টায় শেষ হয়। এসময় সবার হাতে ছিল সিসা দূষণ প্রতিরোধমূলক ব্যানার, ফেস্টুন, প্ল্যাকার্ড এবং মুখরিত ছিল “সিসা দূষণ প্রতিরোধে, আমরা আছি একসাথে”- সহ বিভিন্ন স্লোগানে। সিসার বিষক্রিয়া প্রতিরোধ করতে সর্বস্তরে সচেতনতা বাড়ানো এবং সরকার ও নীতিনির্ধারণী মহলকে এবিষয়ে আইন ও নীতিমালার যথাযথ প্রয়োগ করে কঠোর ও কার্যকরী পদক্ষেপ নিতে জোর দেওয়া ছিল অন্যতম উদ্দেশ্য। এসময় অংশগ্রহণকারীদের মধ্যে সিসা দূষণ বিষয়ক লিফলেট ও স্টিকার বিতরণ করা হয়।
সিসা দূষণ প্রতিরোধের জন্য জনসচেতনতা গড়ে তুলতে, প্রতি বছর অক্টোবর মাসে “আন্তর্জাতিক সিসা দূষণ প্রতিরোধ সপ্তাহ ২০২৪” সারাবিশ্বে পালিত হয়। জাতিসংঘের বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার আহ্বানে এবছর ২০শে অক্টোবর থেকে ২৬শে অক্টোবর পর্যন্ত সপ্তাহটি পালন করা হবে। এবারের দিবসের মূল লক্ষ্য হলো সাধারণ মানুষ, সরকার, সুশীল সমাজ, স্বাস্থ্যকর্মী, বেসরকারী প্রতিষ্ঠান এবং অন্যান্যদের মাঝে সিসা দূষণের ক্ষতিকর দিকগুলো তুলে ধরা এবং শিশুদের স্বাস্থ্য সুরক্ষায় কার্যকরী উদ্যোগ নেয়ার উপর জোর দেয়া। বাংলাদেশে সিসা দূষণের বিস্তৃতি ভয়াবহ পর্যায়ে থাকা সত্ত্বেও এর প্রভাব ও উৎস নিয়ে সাধারণ জনগণ ও নীতিনির্ধারণী মহলে সচেতনতা খুবই সীমিত। যার ফলে, বিশ্বে সর্বোচ্চ সিসা দূষিত দেশের তালিকায় চতুর্থ অবস্থানে থাকা বাংলাদেশের মানুষদের রক্তে মাত্রাতিরিক্ত সিসার উপস্থিতি পাওয়া গেছে। গবেষণায় দেখা যায়, প্রায় ৩ কোটি ৬০ লাখ শিশু অর্থাৎ দেশের প্রায় ৬০ শতাংশ শিশুর রক্তে উচ্চ মাত্রায় সিসা আছে। সিসা বিষক্রিয়ার শিকার হলে শিশুদের বুদ্ধি কমে যায়, পড়ালেখায় পিছিয়ে পরে, মনোযোগে সমস্যা হয়, আচরণগত সমস্যা যেমন মেজাজ খিটখিটে, উচ্ছৃঙ্খলতা এবং বিভিন্ন অপরাধমূলক কাজে জড়িয়ে পরার লক্ষণ দেখা যায়। প্রাপ্তবয়স্কদের মধ্যে সিসা দূষণের কারণে কার্ডিওভাসকুলার ডিজিজ (সিভিডি) বা হৃদরোগের ঝুঁকি বেড়ে যাচ্ছে যার ফলে বছরে প্রায় ১৪০,০০০ মানুষ মারা যাচ্ছে। গর্ভবতী নারীদের রক্তে সিসার উপস্থিতি গর্ভপাত, মৃত সন্তান প্রসবসহ নানা ঝুঁকির সৃষ্টি করে। বুদ্ধিমত্তা হ্রাস ও হৃদরোগে মৃত্যুর ফলে দেশের আর্থিক ক্ষতি হয় প্রায় ২৮,৬৩৩ মিলিয়ন আমেরিকান ডলার, যার কারণে দেশে বছরে ৬ থেকে ৯ শতাংশ পর্যন্ত জিডিপি ঘাটতি হয়।
আমরা দৈনন্দিন ব্যবহার করি এমন অনেক জিনিসপত্রে সিসা মেশানো থাকতে পারে। যেমন: দেয়াল রং, অ্যালুমিনিয়াম ও সিরামিকের বাসনপত্র, মসলা, শিশুদের খেলনা, কসমেটিক্স বা প্রসাধনী, চাষকৃত মাছের খাবারসহ আরও অনেক কিছুতেই সিসা মেশানো হয়। অনিরাপদে, খোলা জায়গায় যখন সিসা-অ্যাসিড ব্যাটারি ভাঙ্গা ও সিসা গলানো হয় রিসাইক্লিং এর জন্য তখন সিসা পরিবেশে উন্মুক্ত হয়ে দূষণ ছড়ায়।
র্যালি ও মানববন্ধন শেষে যুবসমাজকে সিসা দূষণ প্রতিরোধ কার্যক্রমে যুক্ত করার ক্ষেত্রে গুরুত্ব আরোপ করে ইয়ুথ লীড গ্লোবাল এর প্রেসিডেন্ট রাকিবুল ইসলাম ইফতি বলেন, বাংলাদেশ সীসা দূষণে ৪র্থ সর্বোচ্চ আক্রান্ত দেশ। প্রায় ৭০% বুদ্ধিবৃত্তিক পঙ্গুত্ব সীসার ফলে হয়ে থাকে। এর ফলে দক্ষতা হ্রাসে বার্ষিক ১.৬ হাজার কোটি মার্কিন ডলার ক্ষতি হয়। গড়ে বাংলাদেশের প্রত্যেক মানুষের রক্তে ৬-৮ মাইক্রোগ্রাম সীসা/ডেসিলিটার এ পাওয়া গিয়েছে যা বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা নির্ধারিত মাত্রা ৫ থেকে অনেক বেশি। বাংলাদেশের আনুমানিক ৩ কোটি ৫৫ লাখ শিশু সীসা দূষণে আক্রান্ত। সীসা দূষণের প্রধান উৎস সীসা ব্যাটারি পুনঃচক্রায়ন ও হলুদে সীসা যোগ করা। জাহাজ ভাঙা শিল্প থেকে সীসা ও অ্যাসবেস্টস ছড়িয়ে পরে। সীসার প্রভাবে শিশুর বুদ্ধিবৃত্তিক বিকাশ বাঁধাপ্রাপ্ত হয়। সরকারি অনুমোদন ছাড়া কারো সীসা প্রক্রিয়াজাতকরণের অনুমোদন নেই। তবে কেউ এই নিয়ম মান্য করে না। ইউনিসেফ ও পিউর আর্থ বাংলাদেশ সংস্থা এই বিষয়ে আইন প্রয়োগ কার্যকরী করতে কাজ করছে। নারায়ণগঞ্জে গত কয়েকদিন আগে সিসা ব্যাটারী কারখানা আন্দোলন করে বন্ধ করা হয়েছে। আমরা সিসা দূষণ মুক্ত নিরাপদ পরিবেশ চাই। তাই অবিলম্বে পরিবেশ অধিদপ্তর ও সংশ্লিষ্ট সকল কর্তৃপক্ষের হস্তক্ষেপ কামনা করছি।
র্যালি, মানববন্ধন ও আলোচনা শেষে অংশগ্রহণকারীরা সরকার ও নীতিনির্ধারকদের প্রতি পাঁচ দফা দাবী জানায়: ভোগ্যপণ্য ও নিত্য ব্যবহার্য পণ্য যেমন অ্যালুমিনিয়ামের রান্নার বাসনপত্র, দেয়াল রং, শিশুদের খেলনা ইত্যাদিতে ক্ষতিকারক ভারী ধাতু সিসা মেশানো বন্ধ করতে বিভিন্ন জিনিসের নিরাপদ মানদণ্ড ও কঠোর মনিটরিং নিশ্চিত করা, দেশের আনাচে-কানাচে গড়ে ওঠা অনিরাপদ সিসা-অ্যাসিড ব্যাটারি কারখানাগুলো বন্ধ করে বা রূপান্তরিত করে নিরাপদ ও পরিকল্পিত রিসাইক্লিং ব্যবস্থা নিশ্চিত করা, অবৈধ সিসা ব্যাটারি কারখানার কারণে দূষিত এলাকাগুলো চিহ্নিত করে মনিটরিং ব্যবস্থা গড়ে তোলা এবং সিসা দূষিত অঞ্চলগুলো পরিষ্কার করা, সিসা দূষণ প্রতিরোধে বিদ্যমান আইন ও নীতিমালাগুলো পর্যালোচনা করে প্রয়োজনে নতুন আইন প্রণয়ন করা এবং আইনের প্রয়োগ নিশ্চিত করা, এবং সকল অংশীদ্বারদের সাথে নিয়ে জাতীয় পর্যায়ে সিসা দূষণের উৎস ও ভয়াবতা সম্পর্কে গণসচেতনতা সৃষ্টি করে স্বাস্থ্য ও পরিবেশ রক্ষা করা।