শনি. সেপ্টে ২১, ২০২৪

ইলিশ: বছর বছর ‘উপহার’ পেত ভারত, এবার কি পাত খালি থাকবে?

আসছে অক্টোবরে দুর্গাপূজা। এরই মধ্যে সব প্রস্তুতি নিতে শুরু করেছে ভারতীয়রা। কিন্তু এক জায়গায় এসে থমকে যেতে হচ্ছে তাদের। এবার সবার পাতে নাও মিলতে পারে পদ্মার ইলিশ। এর প্রধান কারণ, শেখ হাসিনা আর বাংলাদেশের সরকারপ্রধান নেই। ক্ষমতায় এসেছে অন্তর্বর্তী সরকার। এসেই ভারতে ইলিশ পাঠানোর ব্যাপারে নেতিবাচক মন্তব্য করেছেন সরকারের উপদেষ্টা। তাহলে এবার কি ভারতীয়রা পদ্মার ইলিশ পাবে না?

ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানের মুখে গত ৫ আগস্ট পদত্যাগ করে দেশ ছাড়েন আওয়ামী লীগের সভানেত্রী শেখ হাসিনা। এরপর ক্ষমতায় বসে অন্তর্বর্তী সরকার। এই সরকারের প্রধান হন শান্তিতে নোবেলজয়ী অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ ইউনূস। আর এরপর থেকেই বাংলাদেশ-ভারত সম্পর্কে ভাটা পড়তে থাকে। গত এক মাসে সম্পর্ক ক্রমশ বিরূপই হয়েছে।

অন্তর্বর্তী সরকারের মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা ফরিদা আখতার সম্প্রতি বলেছেন, ‘দেশের মানুষের চাহিদা মিটিয়ে তারপর ইলিশ বিদেশে রপ্তানি করা হবে। দেশের মানুষ ইলিশ পাবে না, আর রপ্তানি হবে–সেটা হতে পারে না। ফলে এবার দুর্গাপূজায় ভারতে যাতে কোনো ইলিশ না যায়, তার জন্য বাণিজ্য মন্ত্রণালয়কে বলেছি।’

পদ্মার ইলিশের স্বাদ ও গঠন অন্য সব ইলিশের তুলনায় আলাদা। বাংলাদেশ থেকে গঙ্গা নদীর শাখা পদ্মা থেকে আহরণ করা এই ইলিশ রন্ধনশিল্পে বিশেষ স্থান দখল করে আছে। বলা হয়ে থাকে, পদ্মার ইলিশের ঘন ও রসালো স্বাদে আলাদা বৈশিষ্ট্য রয়েছে, যা অন্য কোনো ইলিশে পাওয়া যায় না। এই ইলিশ দুর্গাপূজার সময় বাঙালির খাদ্যতালিকার অন্যতম প্রধান আকর্ষণ। পদ্মার ইলিশ সম্পর্কে একটি প্রচলিত কথাও রয়েছে, ‘মাছের রাজা ইলিশ’। 

এবার নিষেধাজ্ঞার ফলে এই মাছের রাজার ভারতীয় বাজারে পৌঁছানোর পথ অনেকটাই বন্ধ হয়ে গেছে। শেখ হাসিনার আমলে শুরু হওয়া এই ‘ইলিশ কূটনীতি’ এবার নতুন চ্যালেঞ্জের মুখে।

ভারতীয় সংবাদমাধ্যম ইন্ডিয়া টুডে বলছে, ইলিশ কূটনীতি ছিল বাংলাদেশ-ভারত সম্পর্কের একটি গুরুত্বপূর্ণ অংশ। বলা হয়ে থাকে, সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার উদ্যোগে পদ্মার ইলিশের মাধ্যমে দুই দেশের মধ্যে সৌহার্দ্যপূর্ণ সম্পর্ক গড়ে উঠেছিল। 

২০১৯ সালে দুর্গাপূজার উপহার হিসেবে ভারতে ৫০০ টন ইলিশ রপ্তানি করেছিল শেখ হাসিনা সরকার। কিন্তু এবার নতুন সরকারের অধীনে এই প্রথার ধারাবাহিকতা রোধ করা হয়েছে। এতে ভারতের বাজারে ইলিশের দাম বেড়ে যাওয়ার আশঙ্কা তৈরি হয়েছে। পশ্চিমবঙ্গ, মুম্বাই, দিল্লি, বেঙ্গালুরুসহ বিভিন্ন স্থানে ইলিশের চাহিদা তুঙ্গে থাকলেও এবার দাম বেড়ে যাবে।

বিশ্বের প্রায় ৭০ শতাংশ ইলিশ পাওয়া যায় বাংলাদেশের নদীতে। ইলিশ এখানে জাতীয় মাছ। শেখ হাসিনা সরকারের আমলে প্রতি বছরই বিদেশে ইলিশ রপ্তানি হতো–এমন নয়। তিস্তার পানিবণ্টন চুক্তি নিয়ে বিতর্কের জেরে ২০১২ থেকে ২০২০ সাল পর্যন্ত ইলিশ রপ্তানিতে সাধারণ নিষেধাজ্ঞা ছিল। 

তবে ভারতের ক্ষেত্রে এই নিষেধাজ্ঞা তেমন প্রভাব ফেলত না। ২০২২ সালে এই নিষেধাজ্ঞা প্রত্যাহার করা হলেও এর আগেই ভারত বেশ কয়েকবার পেয়েছে উপহার। দুর্গাপূজা, পয়লা বৈশাখ ও জামাই ষষ্ঠীতে ইলিশের কমতি ছিল না ভারতে। এই ইলিশ দিয়েই দুই দেশের মধ্যে সম্পর্ক আরও বন্ধুত্বপূর্ণ হয়েছে বলে মনে করা হয়। আর এতে শেখ হাসিনা ছিলেন ‘নেতৃত্বে’।

ভারতীয় সংবাদমাধ্যম দ্য টেলিগ্রাফ বলছে, প্রথমবার ক্ষমতায় আসার সময় ১৯৯৬ সালে পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী জ্যোতি বসুকে ইলিশ উপহার পাঠান শেখ হাসিনা। সেই থেকে শুরু। এরপরই গঙ্গা নদীর পানিবণ্টন চুক্তি সহজ হয়ে যায়। 

নিষেধাজ্ঞার মধ্যেই ২০১৯ সালে দুর্গাপুজার ‘উপহার’ হিসেবে ভারতে ৫০০ টন ইলিশ রপ্তানি করে শেখ হাসিনা সরকার। ২০২৩ সালের সেপ্টেম্বরে পেট্রাপোল বন্দরে বাংলাদেশ থেকে যায় ৯ ট্রাক ইলিশ। প্রতি ট্রাকে ছিল ৫ টন করে পদ্মার ইলিশ। এসব ইলিশ সেখানে যায় বরিশাল থেকে। দ্য টেলিগ্রাফ বলছে, তখনকার বাণিজ্য মন্ত্রণালয় প্রায় ৪ হাজার টন ইলিশ পাঠানোর অনুমতি দেয় রপ্তানিকারকদের।

ভারতীয় সংবাদমাধ্যম ইন্ডিয়া টুডের ডিজিটাল বিভাগ বলছে, এ বছর সরাসরি পদ্মার ইলিশ পাওয়ার কোনো সম্ভাবনা নেই ভারতের। তবে বিকল্প পথে এবারও পাবে তারা। আর সেই পথ হচ্ছে, ওড়িষ্যা, মিয়ানমার ও গুজরাট। এসব পথে দিল্লির বাজারে পাওয়া যেতে পারে পদ্মার ইলিশ। তবে দাম হবে আকাশচুম্বী। 

এ ব্যাপারে ভারতের আমদানিকারক প্রতিষ্ঠান সিআর পার্কস মার্কেট ওয়ানের এক কর্মকর্তা নাম প্রকাশ না করার শর্তে ইন্ডিয়া টুডে ডিজিটালকে বলেন, ‘বাংলাদেশের গাজীপুরে হোলসেল মার্কেটের সঙ্গে আমাদের যোগাযোগ হয়েছে। তারা মিয়ানমার রুটে ভারতে ইলিশ রপ্তানি করবেন।’

এতে দাম বেড়ে যাবে বলে জানান ওই কর্মকর্তা। তিনি বলেন, কয়েক মাস আগেও এক কেজি ওজনের ইলিশ বিক্রি হতো ২ হাজার ৬০০ টাকায়। কিন্তু এখন বিক্রি করতে হবে ৩ হাজার ২০০ টাকা থেকে ৩ হাজার ৬০০ টাকা দরে।

By admin

Related Post

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *