দক্ষিণাঞ্চলের ব্যর্থতায়ই পুড়েছে আওয়ামী লীগ অফিস

সংগৃহীত

নারায়ণগঞ্জ জেলা ও মহানগর আওয়ামী লীগ কার্যালয় মূলত শহরের দক্ষিণাঞ্চলে। এ দক্ষিণাঞ্চলেই জেলা আওয়ামী লীগের সাবেক সহ সভাপতি নারায়ণগঞ্জ সিটি কর্পোরেশনের মেয়র ডা: সেলিনা হায়াৎ আইভী, সাবেক যুগ্ম সাধারণ জাহাঙ্গীর আলম, মহানগর আওয়ামী লীগের সভাপতি আনোয়ার হোসেন, সাংগঠনিক সম্পাদক জিএম আরাফাত ও মহানগর যুবলীগের সাধারণ সম্পাদক আলী আহাম্মদ রেজা উজ্জলদের মত আরও বাঘা বাঘা নেতাদের বসবাস। আওয়ামী লীগ কার্যালয় থেকে মাত্র ২ তিনশ গজের মধ্যেই এ নেতাদের বাড়ীঘর। কিন্তু বড় অদ্ভুত ব্যাপার, যখন ঘন্টার পর ঘন্টা সময় ধরে আওয়ামী লীগ কার্যালয়ে হামলা, ভাংচুর, লুটপাট ও অগ্নিসংযোগের মত ঘটনা ঘটলো, তখন তারা কেউ মাঠে নামেনি, প্রতিরোধও করেনি।

আওয়ামী লীগ অফিসের এত কাছাকাছি বাড়ীঘর হওয়া সত্বেও সেদিন এই বাঘা বাঘা নেতারাই ইঁদুর বিড়ালোর মত লুকিয়েছিলেন গর্তে। ভয়ে ডরে সব নেতারা বলতে গেলে অনেকটা গা ঢাকাই দিয়েছিলেন। অথচ এই নেতারাই আওয়ামী লীগ অফিসসহ বিভিন্ন সভা সমাবেশে অনেক বড় বড় কথা বলেন। কমিটিতে ঠাই না দেওয়ায় বিদ্রোহ করেন। একই দলের নেতাকর্মী কর্মী হয়ে একজন অপরজনের চরিত্র হনন করেন। বলেন, তারাই ত্যাগী নেতা বাকীসব হাইব্রিড।

কি ভাবছে তৃণমূল

সেদিনে দক্ষিণাঞ্চলের এই শীর্ষ নেতাদের ব্যর্থতার বিষয়ে তৃণমূলের সাথে কথা বললে তারা বলেন, কোটি কোটি টাকা কামাইয়া তারা ঘরে বইয়া থাকবো আর আমরা মাঠে নামবো? এটা কেমন কথা? তারাতো আমাদের মাঠে নামতেও বলেনি। আমরাতো প্রস্তুত ছিলামই। তারা আমাদের নেতা। তাদের নির্দেশ ছাড়া যদি মাঠে নামি, তখন তারাই আমাদের বিরুদ্ধে কথা বলবো।

তৃণমূল আরও বলেন, দলকে পূঁজি করে তারা লাভবান। কেউ মেয়র হইছে, কেউ চেয়ারম্যান হইছিলো, কেউ রেলওয়ের জাগয়া দখল করে কোটি কোটি টাকা কামাচ্ছে। তাদের সামনে পার্টি অফিসে ভাঙচুর হচ্ছে, বঙ্গবন্ধুর প্রতিকৃতিতে আগুন দিচ্ছে তাদেরতো একটুও খারাপ লাগেনি। যদি খারাপই লাগতো, তাহলে তারা আমাদের নিয়েই এগিয়ে আসতো। আসলে টাকা কামাইয়া লাইছে বেশি। তাই পেট মোটা হয়ে গেছে, শরীরে চর্বি জমে গেছে। এজন্য এসব গ্যাঞ্জাম টেঞ্জামে তারা হয়তো যেতে চায় না। আমাদের নেত্রীর উচিত এগুলোকে এখনই দল থেকে বের করে দেওয়া।

রাজনৈতিক বিশ্লেষকদের মতামত

এ বিষয়ে রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা বলছেন, যে দক্ষিণাঞ্চলের নেতাদের কথা বলা হচ্ছে, তাদের মধ্যে সবচেয়ে জনপ্রিয় নাসিক মেয়র ডা: সেলিনা হায়াত আইভী। তবে আনোয়ার সাহেব, আরাফাত, উজ্জলদেরও জনপ্রিয়তা কম নয়। তাই যদি বলি সেদিনে তারা ভয়ে বের হন নাই। তাহলে তাদের এ ভয়ের কারণ কি ছিলো, সেটা আমাদের বোধগোম্য নয়। কারণ তারা ডাকলে হাজার হাজার কর্মী সমর্থকরা মাঠে নামতো। তাছাড়া তাদের সাথে প্রশাসন ছিলো। তারা যদি সেদিন মাঠে নামতেন, তাহলে আন্দোলনকারিরা এত ধ্বংসযজ্ঞ চালাতে পারতো না। মহান মুক্তিযুদ্ধে নেতৃত্বদানকারি দলটির এমন দৈন্যদশা হবে, ভাবতেও পারিনি। আসলে সেদিনের ঘটনায় কেউ দায় এড়াতে পারবেন না। একজন বলবেন, আমাদের সঠিক দিকনির্দেশনা ছিলো না। আমরা বলবো ভাই দল ছেড়ে দেন। আগুন যখন আমার বাড়ির আঙ্গিনায়, তখন আমি কার দিকনির্দেশনার অপেক্ষা করবো। আগেতো আগুন থামাতো যাবো, তাই না? সুতরাং যখন তারা (আন্দোলনকারিরা) দুই নং রেলগেটে অবস্থান করছিলো এবং প্রস্তুতি নেয়ার মতও যথেষ্ট সময় ছিলো তখন সবাই ঐক্যবদ্ধভাবে মাঠে নামার উচিত ছিলো। আপনারা সেটা করেন নাই। আপনারা ব্যর্থ তা বলবো না, আমাদের মতে আপনারা সবাই সুবিধাবাদি। আপনারা কেউ দলকে ভালোবাসতে পারেন নি। দল করেন শুধুমাত্র দল থেকে সুবিধা কুঁড়িয়ে নেয়ার জন্য।

ট্যাগ:

মুন্সীগঞ্জে জার্মান বিএনপির নেতা দেলোয়ার মোল্লাকে সংবর্ধনা

দক্ষিণাঞ্চলের ব্যর্থতায়ই পুড়েছে আওয়ামী লীগ অফিস

প্রকাশঃ 06:38:34 am, Wednesday, 31 July 2024

নারায়ণগঞ্জ জেলা ও মহানগর আওয়ামী লীগ কার্যালয় মূলত শহরের দক্ষিণাঞ্চলে। এ দক্ষিণাঞ্চলেই জেলা আওয়ামী লীগের সাবেক সহ সভাপতি নারায়ণগঞ্জ সিটি কর্পোরেশনের মেয়র ডা: সেলিনা হায়াৎ আইভী, সাবেক যুগ্ম সাধারণ জাহাঙ্গীর আলম, মহানগর আওয়ামী লীগের সভাপতি আনোয়ার হোসেন, সাংগঠনিক সম্পাদক জিএম আরাফাত ও মহানগর যুবলীগের সাধারণ সম্পাদক আলী আহাম্মদ রেজা উজ্জলদের মত আরও বাঘা বাঘা নেতাদের বসবাস। আওয়ামী লীগ কার্যালয় থেকে মাত্র ২ তিনশ গজের মধ্যেই এ নেতাদের বাড়ীঘর। কিন্তু বড় অদ্ভুত ব্যাপার, যখন ঘন্টার পর ঘন্টা সময় ধরে আওয়ামী লীগ কার্যালয়ে হামলা, ভাংচুর, লুটপাট ও অগ্নিসংযোগের মত ঘটনা ঘটলো, তখন তারা কেউ মাঠে নামেনি, প্রতিরোধও করেনি।

আওয়ামী লীগ অফিসের এত কাছাকাছি বাড়ীঘর হওয়া সত্বেও সেদিন এই বাঘা বাঘা নেতারাই ইঁদুর বিড়ালোর মত লুকিয়েছিলেন গর্তে। ভয়ে ডরে সব নেতারা বলতে গেলে অনেকটা গা ঢাকাই দিয়েছিলেন। অথচ এই নেতারাই আওয়ামী লীগ অফিসসহ বিভিন্ন সভা সমাবেশে অনেক বড় বড় কথা বলেন। কমিটিতে ঠাই না দেওয়ায় বিদ্রোহ করেন। একই দলের নেতাকর্মী কর্মী হয়ে একজন অপরজনের চরিত্র হনন করেন। বলেন, তারাই ত্যাগী নেতা বাকীসব হাইব্রিড।

কি ভাবছে তৃণমূল

সেদিনে দক্ষিণাঞ্চলের এই শীর্ষ নেতাদের ব্যর্থতার বিষয়ে তৃণমূলের সাথে কথা বললে তারা বলেন, কোটি কোটি টাকা কামাইয়া তারা ঘরে বইয়া থাকবো আর আমরা মাঠে নামবো? এটা কেমন কথা? তারাতো আমাদের মাঠে নামতেও বলেনি। আমরাতো প্রস্তুত ছিলামই। তারা আমাদের নেতা। তাদের নির্দেশ ছাড়া যদি মাঠে নামি, তখন তারাই আমাদের বিরুদ্ধে কথা বলবো।

তৃণমূল আরও বলেন, দলকে পূঁজি করে তারা লাভবান। কেউ মেয়র হইছে, কেউ চেয়ারম্যান হইছিলো, কেউ রেলওয়ের জাগয়া দখল করে কোটি কোটি টাকা কামাচ্ছে। তাদের সামনে পার্টি অফিসে ভাঙচুর হচ্ছে, বঙ্গবন্ধুর প্রতিকৃতিতে আগুন দিচ্ছে তাদেরতো একটুও খারাপ লাগেনি। যদি খারাপই লাগতো, তাহলে তারা আমাদের নিয়েই এগিয়ে আসতো। আসলে টাকা কামাইয়া লাইছে বেশি। তাই পেট মোটা হয়ে গেছে, শরীরে চর্বি জমে গেছে। এজন্য এসব গ্যাঞ্জাম টেঞ্জামে তারা হয়তো যেতে চায় না। আমাদের নেত্রীর উচিত এগুলোকে এখনই দল থেকে বের করে দেওয়া।

রাজনৈতিক বিশ্লেষকদের মতামত

এ বিষয়ে রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা বলছেন, যে দক্ষিণাঞ্চলের নেতাদের কথা বলা হচ্ছে, তাদের মধ্যে সবচেয়ে জনপ্রিয় নাসিক মেয়র ডা: সেলিনা হায়াত আইভী। তবে আনোয়ার সাহেব, আরাফাত, উজ্জলদেরও জনপ্রিয়তা কম নয়। তাই যদি বলি সেদিনে তারা ভয়ে বের হন নাই। তাহলে তাদের এ ভয়ের কারণ কি ছিলো, সেটা আমাদের বোধগোম্য নয়। কারণ তারা ডাকলে হাজার হাজার কর্মী সমর্থকরা মাঠে নামতো। তাছাড়া তাদের সাথে প্রশাসন ছিলো। তারা যদি সেদিন মাঠে নামতেন, তাহলে আন্দোলনকারিরা এত ধ্বংসযজ্ঞ চালাতে পারতো না। মহান মুক্তিযুদ্ধে নেতৃত্বদানকারি দলটির এমন দৈন্যদশা হবে, ভাবতেও পারিনি। আসলে সেদিনের ঘটনায় কেউ দায় এড়াতে পারবেন না। একজন বলবেন, আমাদের সঠিক দিকনির্দেশনা ছিলো না। আমরা বলবো ভাই দল ছেড়ে দেন। আগুন যখন আমার বাড়ির আঙ্গিনায়, তখন আমি কার দিকনির্দেশনার অপেক্ষা করবো। আগেতো আগুন থামাতো যাবো, তাই না? সুতরাং যখন তারা (আন্দোলনকারিরা) দুই নং রেলগেটে অবস্থান করছিলো এবং প্রস্তুতি নেয়ার মতও যথেষ্ট সময় ছিলো তখন সবাই ঐক্যবদ্ধভাবে মাঠে নামার উচিত ছিলো। আপনারা সেটা করেন নাই। আপনারা ব্যর্থ তা বলবো না, আমাদের মতে আপনারা সবাই সুবিধাবাদি। আপনারা কেউ দলকে ভালোবাসতে পারেন নি। দল করেন শুধুমাত্র দল থেকে সুবিধা কুঁড়িয়ে নেয়ার জন্য।