অরক্ষিত হয়ে পড়েছে ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কের নারায়ণগঞ্জের সিদ্ধিরগঞ্জের কাঁচপুর সেতু থেকে লিংক রোড পর্যন্ত সাড়ে তিন কিলোমিটার এলাকা। বিশেষ করে কাঁচপুর সেতু এলাকাটি সবচেয়ে বেশি ছিনতাইকারীদের অভরায়ণ্যে পরিণত হয়েছে বলে স্থানীয়রা জানান।
এ মহাসড়ক দিয়ে পূর্বাঞ্চালের ১৮ টি জেলার দুরপাল্লার যাত্রীবাহী বাসসহ অসংখ্য যানবহন চলাচল করছে। ঢাকা-চট্টগ্রাম ও ঢাকা-সিলেট মহাসড়কের গুরুত্বপূর্ণ এ সেতুটি দিয়ে পায়ে হেঁটেও প্রতিদিন হাজার হাজার মানুষ চলাচল করে থাকেন। পাশাপাশি এ সেতুতে প্রতিদিন শতশত ভ্রমন পিপাসুরাও ভিড় জমান।
ভূক্তভোগী ও স্থানীয়দের অভিযোগ, এ সেতুটিতে পুলিশ প্রশাসনের নজরধারী না থাকার সুযোগে সন্ধ্যা নামলেই ভয়ঙ্কর হয়ে উঠে সশস্ত্র ছিনতাইকারীরা। গত ১০ মাসে ঢাকা-চট্টগ্রাম ও ঢাকা-সিলেট মহাসড়কের গুরুত্বপূর্ণ এ সাড়ে তিন কিলোমিটার এলাকায় সশস্ত্র ছিনতাইকারীদের হাতে ১জন মাদরাসার শিক্ষার্থীসহ ৩ জন নৃশসংশভাবে খুন হয়েছেন। আহত হয়েছেন অনেকেই।
ছিনতাইকারীদের কবল থেকে প্রবাসী, পরিবহন শ্রমিক, ব্যবসায়ী, সাংবাদিক, এমনকি আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যরাও রক্ষা পাচ্ছেন না। এখানকার ছিনতাইকারীরা খুবই ভয়ঙ্কর হয়ে উঠেছেন বলে জানিয়েছে ভূক্তভোগীরা। যে কোন সময় তারা প্রাণ নিতেও দ্বিধাবোধ করছেন না। এতে যাত্রী ও পথচারীরা এখন চরম ছিনতাই আতঙ্কে ভূগছেন।
তবে হাইওয়ে পুলিশের শিমরাইল পুলিশ ক্যাম্পের ইনচার্জ টিআই একেএম শরফুদ্দিন বলেন, ছিনতাই রোধে আমরা আমাদের টহল বাড়াচ্ছি।
গত ১৯ এপ্রিল বিকেলে মাদ্রসার শিক্ষার্থী মো. সিফাত তার বন্ধু সাগর শেখকে (১৯) নিয়ে কাঁচপুর সেতু এলাকায় ঘুরতে যান। ঘুরাফেরা শেষে রাত পৌনে ৯টায় তারা উভয়ে বাড়ি ফেরার উদ্দেশ্যে রওনা দিয়ে ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কের কাঁচপুর সেতুর পশ্চিম পাশে আসামাত্রই ২ জন অজ্ঞাতনামা ছিনতাইকারী তাদের পথ আটক দেয়। এরপর সিফাতের সঙ্গে থাকা দুই হাজার টাকা ও মোবাইল ফোন ছিনিয়ে নেওয়ার চেষ্টা করে। তখন সিফাতের বন্ধু ছিনতাইকারীদের হাত থেকে পালিয়ে গেলে সিফাতকে একা পেয়ে ধারালো চাকু দিয়ে কুপিয়ে রক্তাক্ত জখম করে ওই ছিনতাইকারীরা। একপর্যায়ে সিফাতের সঙ্গে থাকা নগদ দুই হাজার টাকা ও তার মোবাইল ফোন ছিনিয়ে নিয়ে দ্রুতই সটকে পড়ে। পরে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় ২৩ এপ্রিল দুপুরে তার মৃত্যু হয়। এ ঘটনায় সিফাতের মামা আল-ইমাম বাদী হয়ে অজ্ঞাতনামা ছিনতাইকারীদের আসামী করে মামলা দায়ের করলেও পুলিশ কোন ছিনতাইকারীকে গ্রেফতার করতে পারেনি।
গত বছরের ৩ অক্টোবর বিকেল সাড়ে ৫ টার দিকে কাঁচপুর সেতুর উপর সশস্ত্র ছিনতাইকারীদের ছুরিকাঘাতে প্রাণ হারান সুভাস চন্দ্র শর্মা (৪৫) নামে এক গার্মেন্টস শ্রমিক। এসময় পুলিশ নিহতের পকেটে থাকা ২ হাজার ২৫০ টাকা ও একটি মোবাইল ফোন উদ্ধার করে। তিনি নারায়ণগঞ্জের বন্দরের কেএনসেন রোড এলাকার দিনেশ চন্দ্র শর্মার ছেলে। তিনি একটি গার্মেন্টসে কাজ করতেন বলে জানিয়েছেন পুলিশ। এ ঘটনায় মামলা হলেও পুলিশ ঘটনার সাথে জড়িত কাউকে গ্রেফতার করতে পারেনি।
এর আগে গত বছরের ১০ জুলাই রাতে কাঁচপুর সেতুর পশ্চিম পাশে ছিনতাইকারীর ছুরিকাঘাতে খুন হয় আরমানুল ইসলাম রোহান (২২) নামে একজন। এসময় তার ভাই আরমানুল ইসলাম রিপন (২০) ছুরিকাঘাতে আহত হন। এ ঘটনায় মামলা হওয়ার পর জেলা ডিবি পুলিশ দুই ছিনতাইকারীকে গ্রেপ্তার করে। এছাড়াও গত বছরের ১৩ জানুয়ারি দিবাগত রাত ৩টায় আমেরিকা ফেরত প্রবাসী ও সিদ্ধিরগঞ্জ থানা প্রেস ক্লাবের অর্থ সম্পাদক মোঃ আরিফ হোসাইন সিদ্ধিরগঞ্জের কাঁচপুর সেতু এলাকায় পৌঁছালে ডিবি পুলিশ পরিচয় দিয়ে সশস্ত্র ডাকাত দল নগদ ৫ হাজার ১২০ ইউএস ডলার, মোবাইল ফোনসহ ১০ লাখ টাকার মালামাল লুট করে নিয়ে যায়। এ ঘটনায় মামলা হলেও পুলিশ কোন মালামাল উদ্ধার বা কাউকে গ্রেপ্তার করতে পারেনি। এদিকে গত বছরের ১২ জুন রাত সাড়ে ১০ টার দিকে মানিকগঞ্জের পাটুরিয়া থেকে ছেড়ে আসা একটি যাত্রীবাহী বাস কাঁচপুর সেতুর নিচে পৌঁছলে দুটি মোটরসাইকেল দিয়ে আসা ৬ জন ছিনতাইকারী বাসচালক মো: শিপন মিয়া ও হেলপার রনি শেখকে দেশীয় অস্ত্রের মূখে জিম্মি ও মারধর করে ঐ দিনের আয় ছিনিয়ে নেয়। এঘটনা চালক শিপন মিয়া বাদী হয়ে সিদ্ধিরগঞ্জ থানায় ১৩ জুন লিখিত অভিযোগ করেন।
এরআগে আগে মহাসড়কের মৌচাক এলাকায় ছিনতাইকারীর কবলে পড়েন সিদ্ধিরগঞ্জ থানা প্রেস ক্লাবের যুগ্ম-সম্পাদক ও দৈনিক কালের কণ্ঠের সিদ্ধিরগঞ্জ প্রতিনিধি আসাদুজ্জামান নূর। পুলিশের পরামর্শে তিনি থানায় জিডি করলেও তার কাছ থেকে ছিনিয়ে নেওয়া নগদ টাকা ও স্মাট মোবাইল উদ্ধার করতে পারেনি পুলিশ।
গত ২৫ এপ্রিল রাত ১ টায় তিনজন ছিনতাইকারী ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কের সিদ্ধিরগঞ্জের মাদানাীনগর এলাকায় মোটরসাইকেল আরোহী খালেদ মাহমুদ ও তার মামা সাজ্জাদ হোসেনের মোটরসাইকেল (নং- ঢাকা মেট্টো-ল-৫৯-১৫৮২) গতিরোধ করে চাপাতি ও দেশীয় অস্ত্রের ভয়ভীতি দেখিয়ে মূল্যবান তিনটি মোবাইল ফোন, চার হাজার টাকা, মানিব্যাগ এবং তাদের মোটরসাইকেলটি ছিনিয়ে নিয়ে যায়। মোবাইল ট্রেকিংয়ের মাধ্যমে বন্দরের কামতাল থানা পুলিশ ছিনতাইকারীদের মোটরসাইকেলটি উদ্ধার করলেও খালেদ মাহমুদের হুন্ডা, মোবাইল ফোন উদ্ধার বা ছিতাইকারীদের গ্রেপ্তার করতে পারেনি।

এ বিষয়ে সিদ্ধিরগঞ্জ থানার পরিদর্শক (তদন্ত) মোজাম্মেল হক বলেন, দ্রুত সময়ের মধ্যে ছিনতাইকারীদের গ্রেপ্তার করে আইনের আওতায় নিয়ে আসার জন্য পুলিশের একাধিক টিম মাঠে কাজ করছে।