বুধ. নভে ১৩, ২০২৪

মহানবমী আজ, মণ্ডপে বিদায়ের সুর

বিদায়ের ঘন্টা

শারদীয় দুর্গোৎসবের মহানবমী আজ। মণ্ডপে-মণ্ডপে বিদায়ের সুর। আগামীকাল বিজয়া দশমির মধ্য দিয়ে শেষ হবে শারদীয় দুর্গোৎসব।

পঞ্জিকানুযায়ী আজ শনিবার মহানবমী পূজা। অনেকের বিশ্বাস, মহানবমীর দিন হচ্ছে দেবী দুর্গাকে প্রাণ ভরে দেখে নেওয়ার ক্ষণ। এদিন অগ্নিকে প্রতীক করে সব দেবদেবীকে আহুতি দেওয়া হয়।

এদিন সন্ধ্যায় দেবীদুর্গার ‘মহাআরতি’ করা হয়। মহানবমীতে বলিদান ও নবমী হোমের রীতি রয়েছে। মূলত ‘সন্ধিপূজা’ শেষ হলে শুরু হয় মহানবমী। আজ ১০৮টি নীলপদ্মে পূজা হবে দেবীদুর্গার। পূজা শেষে যথারীতি থাকবে অঞ্জলি নিবেদন ও প্রসাদ বিতরণ। মণ্ডপে মণ্ডপে প্রাণের উৎসবে ভক্তদের মাঝে বইবে বিষাদের সুর। এদিনেই সবচেয়ে বেশি ভিড় হয়ে থাকে পূজামণ্ডপগুলোতে।

নবমী তিথি শুরুই হয় সন্ধিপূজা দিয়ে। সন্ধিপূজা হয় অষ্টমী তিথির শেষ ২৪ মিনিট ও নবমীর সূচনার প্রথম ২৪ মিনিট জুড়ে। মূলত দেবী চামুন্ডার পূজা হয় এই সময়ে। ১০৮টি মাটির প্রদীপ জ্বালিয়ে ১০৮টি পদ্মফুল নিবেদন করা হয় দেবীর চরণে। আর ঠিক এই কারণে পূজার মন্ত্রেও সেই বিশেষত্ব উল্লেখ করা হয়েছে।

বুধবার মহাষষ্ঠীর মধ্য দিয়ে শুরু হওয়া শারদীয় এ দুর্গোৎসবের আর শেষ হবে আগামীকাল রোববার বিজয়া দশমীতে প্রতিমা বিসর্জনের মধ্য দিয়ে।

এদিকে, শুক্রবার দেশের বিভিন্ন স্থানে অঞ্জলি আর কুমারী পূজার আয়োজনে সুগন্ধি চন্দন, পুষ্পমালা, ধূপদীপে সমারোহে উদযাপিত হয়েছে মহাষ্টমীর অর্চনা।

শারদীয় দুর্গোৎসবের মহাষ্টমীর দিনে শুক্রবার নারায়ণগঞ্জ ঢাকাসহ দেশের বিভিন্ন স্থানে কুমারীপূজা উদযাপিত হয়েছে। নারায়ণগঞ্জের রামকৃষ্ণ মিশনে কুমারীপূজা দেখতে রীতিমতো ভক্তদের ঢল নামে।
 
সনাতন ধর্মাবলম্বীরা শুক্রবার কুমারী পূজায় আশীর্বাদ ও প্রার্থনা করতে রাজধানীসহ দেশের জেলা-উপজেলা শহরের মণ্ডপে-মণ্ডপে ভিড় করেন। নারায়ণগঞ্জের রামকৃষ্ণ মিশনে সকাল সাড়ে ১০টায় কুমারীপূজা অনুষ্ঠিত হয়। 

কুমারীপূজা দেখতে সকাল থেকেই রামকৃষ্ণ মিশন ও মাঠে ভিড় জমান হাজার-হাজার পুণ্যার্থী। কড়া নিরাপত্তা বেষ্টনির মধ্যে দীর্ঘলাইন ধরে প্রবেশ করতে হয়েছে এখানে। দুর্গাভক্তরা কুমারী মায়ের আরাধনায় মণ্ডপের সামনে উলুধ্বনি দিয়েছেন। ঢাকের বাদ্য, শঙ্খধ্বনিতে পুরো মঠ, মিশন এলাকায় ছড়িয়ে যায় শারদীয় দুর্গোৎসবের আমেজ।

গঙ্গাজল, শুদ্ধ বস্ত্র আর পুষ্পাঞ্জলি মন্ত্র- নিয়ে সবার মঙ্গল কামনার মন্ত্রপাঠের মধ্য দিয়ে চলে অঞ্জলি দেয়ার আচার-আচরণ।

কুমারী পূজার বৈশিষ্ট্য হলো, কুমারীকে পূজা করার সময় দেখা হয় না তার ধর্ম, জাত-পাত। এখনো ঋতুবর্তী হয়নি, এমন এক থেকে ১৬ বছর বয়সী যে কোনো মেয়েই কুমারীরূপে পূজিত হতে পারে। 

দেবীদুর্গা সব নারীর মধ্যে মাতৃরূপে আছেন, এ উপলব্ধি সবার মধ্যে জাগ্রত করার জন্যই কুমারীপূজা অনুষ্ঠিত হয়ে থাকে। ১৬ বছর পর্যন্ত কুমারীর মধ্যে মাতৃভাব প্রতিষ্ঠাই এ পূজার মূল লক্ষ্য। পরে অনুষ্ঠিত সন্ধিপূজায় ১০৮টি মাটির প্রদীপ ও ১০৮টি পদ্মফুল উৎসর্গ করে দেবীর পূজা করা হয়।

কিশোরী কন্যাকে দেবীর আসনে বসিয়ে মাতৃরূপে পূজা-অর্চনা করা হয়। শঙ্খের ধ্বনি, কাঁসর ঘণ্টা, ঢাকের বাদ্য, উলুধ্বনির মধ্য দিয়ে কুমারী মাকে পুষ্পমাল্য পরিয়ে দেয়া হয়। অষ্টমী তিথির পূজা শেষে হয় কুমারী পূজা। 

মূলত কুমারী পূজার ১৬ উপকরণ দিয়ে পূজার আনুষ্ঠানিকতার সূত্রপাত। শুরুতেই গঙ্গাজল ছিটিয়ে কুমারী মাকে পরিপূর্ণ শুদ্ধ করে তোলা হয়। এরপর কুমারী মার চরণযুগল ধুয়ে তাকে বিশেষ অর্ঘ্য দেওয়া হয়। অর্ঘ্যের শঙ্খপাত্র সাজানো হয় গঙ্গাজল, বেলপাতা, আতপচাল, চন্দন, পুষ্প ও দূর্বাঘাস দিয়ে। অর্ঘ্য দেওয়ার পর দেবীর গলায় পরানো হয় পুষ্পমাল্য। এরপর অগ্নি, জল, বস্ত্র, পুষ্প ও বায়ু এই পাঁচ উপকরণ দেওয়া হয় কুমারীপূজাতে।

শাস্ত্রমতে, কোলাসুরকে বধ করার মধ্য দিয়ে কুমারী পূজার উদ্ভব। বর্ণিত রয়েছে- কোলাসুর এক সময় স্বর্গ-মর্ত্য অধিকার করায় বাকি বিপন্ন দেবগণ মহাকালীর শরণাপন্ন হন। সেই সব দেবগণের আবেদনে সাড়া দিয়ে দেবী পুণর্জন্মে কুমারীরূপে কোলাসুরকে বধ করেন। এরপর থেকেই মর্ত্যে কুমারী পূজার প্রচলন হয়।

By admin

Related Post

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *