শনি. সেপ্টে ২১, ২০২৪

টানাবৃষ্টিতে নারায়ণগঞ্জে জনজীবন বিপর্যস্ত

বঙ্গোপসাগরে সৃষ্ট নিম্নচাপটি ঘনীভূত হয়ে স্থল গভীর নিম্নচাপে পরিণত হয়েছে। যার প্রভাব সারা দেশের মতো নারায়ণগঞ্জেও বৃষ্টি অব্যাহত রয়েছে। ভোর থেকেই এতে ভোগান্তিতে পড়েন অফিসগামী ও স্কুলের শিক্ষার্থীরা।

আর কয়েক দিনের বৃষ্টিতে শহরের বড় রাস্তাগুলোতে পানি না উঠলেও অনেক এলাকার অলিগলিতে পানি জমে গেছে। বৃষ্টির কারণে কাদাপানিতে সয়লাব সবদিক। বিপর্যস্ত হয়ে পড়েছে তিলোত্তমা এ শহর ও শহরের বাইরের জনজীবন। ভোরের বৃষ্টিতে অনেক শিক্ষার্থী স্কুলে যেতে পারেনি। সবচেয়ে বেশি ভোগান্তিতে পড়েছেন শ্রমজীবীরা লোকজন।

নিম্নচাপের প্রভাবে গত শুক্রবার (১৩ সেপ্টেম্বর) রাত থেকেই নারায়ণগঞ্জের ঝড়ছে বৃষ্টি। কখনো ঝিরিঝিরি তো কখনো মুষলধারে নামছে বারিধারা। টানা বৃষ্টিতে নারায়ণগঞ্জের জনজীবন বিপর্যস্ত হয়ে পড়েছে।

এদিকে টানাবৃষ্টিতে তলিয়ে যায় নগরীর অনেক এলাকার রাস্তা। কোনো কোনো সড়কে পানি জমে যায়। সড়কে রিকশাও ছিলো কম। গণপরিবহনও চাহিদা অনুযায়ী মেলেনি। ফলে কর্মস্থলের উদ্দেশে বেরিয়ে অনেকেই বিপাকে পড়েন। বৃষ্টি মাথায় নিয়ে কর্মজীবীদের যানবাহনের জন্য অপেক্ষা করতে দেখা যায়। দোকানপাটও খুলতে দেরি করেন ব্যবসায়ীরা। বেচাবিক্রিও তেমন নেই।

সরেজমিনে নগরীর চাষাড়া, দুই নং রেলগেইট, নারায়ণগঞ্জ লঞ্চ ও বাস টার্মিনাল, কালীরবাজার, নিতাইগঞ্জ ঘুরে দেখা যায়- একটানা বৃষ্টির কারণে নগরের মানুষ আজ খুব একটা ঘর থেকে বের হচ্ছেন না। যারা একেবারেই বাসা থেকে বের না হয়ে পারছেন না তারাই ছুটছেন এই বৈরি আবহাওয়ার মধ্যে।

বৃষ্টির কারণে সড়কে যানবাহনের সংখ্যা অন্যান্য দিনের তুলনায় অনেক কম। লোকজন গণপরিবহনের জন্য সড়কে দাঁড়িয়ে আছেন। যারা ছাতা নিয়ে বের হননি, তারা ভিজে যাচ্ছেন। বৃষ্টির কারণে সিএনজিচালিত অটোরিকশা ও রিকশাচালকের আজ অতিরিক্ত ভাড়া চাইছিলেন বলে অভিযোগ করেছেন যাত্রীরা।

ফতুল্লায় একটি বেসরকারি প্রতিষ্ঠানে চাকরি করেন আওলাদ হোসেন। তিনি থাকেন শহরের খানপুরে। বৃষ্টির কারণে সকালে অফিসে যেতে তাঁর প্রায় দেড় ঘণ্টা দেরি হয়। সকালে অফিসের জন্য বেরিয়ে গাড়ি পাচ্ছিলাম না। পরে প্রায় দ্বিগুণ ভাড়ায় সিএনজিচালিত একটি অটোরিকশা ভাড়া করে অফিসে যাই। টাকাও গেল, অফিসেও দেরি হলো।

দুই নং রেলগেইট এলাকায় কথা হয় নির্মাণ শ্রমিক লোকমান মিয়ার সাথে। তিনি জানান, নির্ধারিত জায়গায় বসে অনেকক্ষণ অপেক্ষা করছেন, তবে কোন ঠিকাদাররা আসেনি। তার জন্য তার আর কাজে যাওয়া হয়নি।

আবুল হোসেন নামের অপর এক শ্রমিক বলেন, দিন আনি দিন খাই, হাতে কোন টাকা নেই। আগামীকালও এরকম আবহাওয়া থাকলে না খেয়ে থাকতে হবে পরিবার পরিজনকে নিয়ে।

অটোরিকশাচালক নুরুল ইসলাম বলেন, সকালে ভাড়া নিয়ে চাষাড়া থেকে নিতাইগঞ্জ এসেছি। এখন বৃষ্টির কারণে কোনো দিকে যেতে পারছি না। অনেক অটোরিকশাচালক বৃষ্টির কারণে ঘর থেকেও বের হতে পারছে না।

এদিকে সকাল ১০টায় চাষাড়া মার্কেটের সামনে দাঁড়িয়েছিলেন পানোমারা মার্কেটের ব্যবসায়ী রাজু আহমেদ। অপেক্ষা করছেন কর্মচারীর জন্য। তিনি বলেন, দোকানপাটে এমনিতেই বেচাকেনা কম। দুদিন ধরে থেকেও বৃষ্টি হচ্ছে। দোকান খুললেও কাস্টমার আসছে না।

আবহাওয়াবিদ হাফিজুর রহমান বলেন, ‘নিম্নচাপের প্রভাবে আকাশে মেঘমালা থাকায় বৃষ্টি হচ্ছে। আগামীকাল পর্যন্ত বৃষ্টি থাকতে পারে। এরপর কমে আসবে। নিম্নচাপের প্রভাবে সমুদ্র বন্দর ও নদী বন্দরে ঝড়ো হাওয়া বয়ে যেতে পারে বলে আগের মতোই সমুদ্র বন্দরে ৩ এবং নদী বন্দরে ২ নম্বর সতর্কসংকেত দেখাতে বলা হয়েছে।’ পাশাপাশি ভারী বৃষ্টিতে পাহাড়ি এলাকায় ভূমিধ্বসের শঙ্কার কথাও জানান তিনি।

গত ২৪ ঘণ্টায় (গতকাল সন্ধ্যা ৬টা থেকে) ঢাকায় বৃষ্টি হয়েছে মাত্র ৩২ মিলিমিটার। দেশের সর্বোচ্চ বৃষ্টি হয়েছে পটুয়াখালিতে ২২৩ মিলিমিটার। এছাড়া গোপালগঞ্জে ১৩৩, পটুয়াখালীর খেপুপাড়ায় ১৮৯, বরিশালে ১৭৭, ভোলায় ১৩৪, বাগেরহাটের মোংলায় ৯৮, সাতক্ষীরা ও সীতাকুন্ডে ৯৪ এবং কক্সবাজারে ৮৮ মিলিমিটার বৃষ্টি রেকর্ড করা হয়েছে।

By admin

Related Post

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *