ধেয়ে আসছে ঘূর্ণিঝড় ‘ডানা’। জানা গেছে, বৃহস্পতিবার সকালে ওড়িশা-পশ্চিমবঙ্গের কাছে পৌঁছাবে ‘ডানা’। বুধবার থেকেই আবহাওয়ার পরিবর্তন হতে শুরু করবে। তবে ঝড়টি কোথায় আছড়ে পড়বে, তা এখনো স্পষ্ট নয়।
ভারতীয় আবহাওয়া দপ্তর জানিয়েছে, ইতোমধ্যেই বঙ্গোপসাগরে তৈরি হয়ে গেছে গভীর নিম্নচাপ, যা বুধবারের মধ্যে সাইক্লোনে পরিণত হতে পারে।
সংস্থাটি আরও জানিয়েছে, ঘূর্ণিঝড় ডানা আছড়ে পড়তে পারে ওড়িশার পুরী এবং পশ্চিমবঙ্গের সাগর দ্বীপের মধ্যবর্তী অংশে। বুধ, বৃহস্পতি এবং শুক্রবার প্রবল ঝড়-বৃষ্টির আশঙ্কা রয়েছে সংলগ্ন অঞ্চলগুলোতে। পুরী লন্ডভন্ড হওয়ার আশঙ্কা রয়েছে।
আর এ কারণেই তড়িঘড়ি ‘ডেঞ্জার অ্যালার্ট’ জারি করেছে ওড়িশা প্রশাসন।
আগামী ২৪ এবং ২৫ অক্টোবর ওড়িশা এবং পশ্চিমবঙ্গের উপকূলে প্রচুর বৃষ্টিপাতের পূর্বাভাস দিয়েছে ভারতের আবহাওয়া অফিস। বিশেষ সতর্কতা জারি করা হয়েছে ওড়িশার পুরী, গঞ্জাম, জগৎসিংহপুর এবং ভদ্রক জেলায়।
গোপালপুর, পারাদ্বীপ এবং ধর্ম পোর্টে ‘ডেঞ্জার সিগনাল-১’ জারি করার নির্দেশ দিয়েছেন অতিরিক্ত রিলিফ কমিশনার পদ্মনাভ বেহারা। এক চিঠিতে তিনি বলেন, ‘এক্সট্রিমলি আর্জেন্ট। অবিলম্বে গোপালপুর, পারাদ্বীপ এবং ধর্ম পোর্টে সতর্কবার্তা জারি করতে হবে।’
এদিকে ওড়িশার স্পেশাল রিলিফ কমিশনার ডিকে সিং ১৪টি জেলার স্কুল এবং অন্যান্য শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বুধবার পর্যন্ত বন্ধ রাখার কথা জানিয়েছেন। গঞ্জাম, পুরী, জগৎসিংহপুর. কেন্দাপাড়া, ভদ্রক, বালেশ্বর, ময়ূরভঞ্জ, কেওনঝড়, ঢেঙ্কানল, জজপুর, আঙ্গুল, খোরধা, নয়াগড় এবং কটকে স্কুল বন্ধের নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।
আইএমডির পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে, বঙ্গোপসাগরে তৈরি হওয়া গভীর নিম্নচাপ ক্রমেই ঘূর্ণিঝড়ে পরিণত হচ্ছে। যা ক্রমশ পশ্চিম এবং উত্তর-পশ্চিমে অগ্রসর হচ্ছে। শেষ পাওয়া আইএমডি আপডেট অনুযায়ী, পারাদ্বীপ থেকে এই ঘূর্ণিঝড় ৭০০ কিলোমিটার দূরে রয়েছে।
সাগর দ্বীপ থেকে ৭৫০ কিলোমিটার দক্ষিণ ও দক্ষিণ-পূর্বে এবং বাংলাদেশের খেপুপাড়া থেকে ৭৩০ কিলোমিটার দূরে রয়েছে।
স্থানীয় আবহওয়াবিদরা বলছেন, এই ঘূর্ণাবর্ত পশ্চিম এবং উত্তর-পশ্চিম দিকে অগ্রসর হয়ে ২৩ অক্টোবর ঘূর্ণিঝড়ে পরিণত হবে। এরপর সেটি অগ্রসর হবে উত্তর-পশ্চিম দিকে। ২৪ অক্টোবর রাতে সেটি পরিণত হবে তীব্র ঘূর্ণিঝড়ে। ২৫ অক্টোবর সকালে ঘূর্ণিঝড় ‘ডানা’-র গতিবেগ থাকবে ঘণ্টায় ১০০ থেকে ১২০ কিলোমিটার।
এদিকে ঘূর্ণিঝড় ডানার প্রভাবে রাজধানী ঢাকাসহ, খুলনা, বরিশাল ও রাজশাহী বিভাগের কিছু কিছু জায়গায় এবং রংপুর, ময়মনসিংহ, চট্টগ্রাম ও সিলেট বিভাগের দুএক জায়গায় বৃষ্টি/বজ্রসহ বৃষ্টি হতে পারে। সারা দেশে দিনের তাপমাত্রা সামান্য কমতে পারে এবং রাতের তাপমাত্রা ১ থেকে ৩ ডিগ্রি সে. বাড়তে পারে।
মঙ্গলবার পরবর্তী ৭২ ঘণ্টার আবহাওয়ার পূর্বাভাসে এ কথা বলা হয়েছে।
সতর্কবার্তায় বলা হয়েছে, উত্তর বঙ্গোপসাগর ও গভীর সাগরে অবস্থানরত সব মাছ ধরার নৌকা ও ট্রলারকে পরবর্তী নির্দেশ না দেওয়া পর্যন্ত উপকূলের কাছাকাছি এসে সাবধানে চলাচল করতে বলা হয়েছে। যেন স্বল্প সময়ের নোটিশে নিরাপদ আশ্রয়ে যেতে পারে।
সাসকাচুয়ান বিশ্ববিদ্যালয়ের পিএইচডি গবেষক ও আবহাওয়াবিদ মোস্তফা কামাল পলাশ সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে একটি পোস্টে বলেছেন, বঙ্গোপসাগরে ‘ডানা’ নামে যে ঘূর্ণিঝড়টি সৃষ্টির আশঙ্কা করা হচ্ছে তা আজ মঙ্গলবার নিম্নচাপ অবস্থায় উন্নীত হয়েছে। আশঙ্কা করা হচ্ছে আজ মধ্য গভীর নিম্নচাপ ও আগামীকাল দুপুরের মধ্যে এটি পূর্ণাঙ্গ ঘূর্ণিঝড়ে পরিণত হবে। সম্ভাব্য ঘূর্ণিঝড় ‘ডানার’ চলার পথও ঘূর্ণিঝড় আম্পানের মতো হবে।
তিনি আরেকটি ফেসবুক পোস্টে বলেন, মঙ্গলবার সকাল ১১টায় ঘূর্ণিঝড়টি আন্দামান-নিকোবার দ্বীপপুঞ্জের ২০০ কিলোমিটার উত্তর-পশ্চিমে নিম্নচাপ কেন্দ্রে অবস্থান করছে। নিম্নচাপের কারণে মেঘের সৃষ্টি হচ্ছে তা ইতোমধ্যে চট্টগ্রাম পর্যন্ত পৌঁছে গেছে। আজ রাতেই চট্টগ্রাম, কক্সবাজার, রাঙ্গামাটি, খাগড়াছড়ি জেলার ওপরে বৃষ্টির আশঙ্কা করা হচ্ছে।
এর আগে গত শনিবার আবহাওয়াবিদ মোস্তফা কামাল পলাশ এক ফেসবুকে পোস্টে দেশের আলু চাষিদের পরামর্শ দেন। সেখানে তিনি বলেন, আগামী ২০ অক্টোবরের পরে জমিতে নতুন করে কৃত্রিম সেচ না দেওয়ার জন্য। বিশেষ করে খুলনা, বরিশাল ও ঢাকা বিভাগের আলু চাষিদের তিনি এ পরামর্শ দেন।
এই আবহাওয়াবিদ আরও বলেন, ‘কৃষকদের পরামর্শ দেওয়া যাচ্ছে যে, শাকসবজির জমি থেকে ঘূর্ণিঝড়ের কারণে জমা বৃষ্টির পানি নিষ্কাশনের ব্যবস্থা করে রাখার জন্য। বিশেষ করে খুলনা বিভাগের জেলাগুলোর উপরে খুবই ভারি বৃষ্টির আশঙ্কা করা যাচ্ছে।’