সোমালি জলদস্যুদের হাতে জিম্মি বাংলাদেশি জাহাজ এমভি আবদুল্লাহ ও ২৩ নাবিক ৩২ দিন পর মুক্তি পেয়েছে। শনিবার (১৩ এপ্রিল) বাংলাদেশ সময় রাত ৩টা ৮মিনিট (সোমালিয়ার সময় রাত ১২টা ৮মিনিটে) জাহাজটি মুক্তি দিয়ে জলদস্যুরা নেমে যায়।
এরপরই জাহাজটি সংযুক্ত আরব আমিরাতে আল হারমিয়া বন্দরের উদ্দেশে রওনা হয়। এ সময় দুই পাশে দুটি যুদ্ধজাহাজের পাহারা নিয়ে এমভি আবদুল্লাহ সোমালিয়া উপকূল ত্যাগ করে।
জাহাজ উদ্ধারে কীভাবে মুক্তিপণের অঙ্ক দস্যুদের হাতে পৌঁছে দেওয়া হয়েছে, তা নাবিকরা প্রত্যক্ষ করেছেন। নাবিকদের একজন তার পরিবারের সদস্যদের জানিয়েছেন, জাহাজের পাশে স্পিডবোটে করে অপেক্ষায় ছিল জলদস্যুরা। ছোট উড়োজাহাজ থেকে জাহাজের পাশে ডলারভর্তি ব্যাগ ফেলা হয়। ব্যাগ পানি থেকে সংগ্রহ করে প্রায় আট ঘণ্টা পর গভীর রাতে দস্যুরা জাহাজ থেকে নেমে যায়।
আরেকজন নাবিকের পরিবারের এক সদস্য বলেন, ডলারভর্তি ব্যাগ পানিতে ফেলার আগে নাবিকদের জাহাজের ডেকে নিয়ে এসে একলাইনে দাঁড় করিয়ে নাবিকদের পেছনে অস্ত্র তাক করে রাখে। উড়োজাহাজ থেকে নাবিকদের হাত তোলার ইঙ্গিত দেওয়া হয়। সব নাবিক হাত তোলার পর সবাই জীবিত আছেন, এমন নিশ্চয়তা পাওয়ার পরই উড়োজাহাজ থেকে ডলারের ব্যাগ ফেলা হয়। ব্যাগে কত ডলার ছিল এ ব্যাপারে কোনো তথ্য পাওয়া যায়নি।
শনিবার বিকেলে মুক্তিপণের অর্থ পেলেও দস্যুরা জাহাজ থেকে নেমে যায়নি। ধারণা করা হচ্ছে, জলে-স্থলে নজরদারি এড়াতেই গভীর রাতে দস্যুরা জাহাজ থেকে নেমে যায়। মুক্তিপণের অর্থ পরিশোধের সময় জিম্মি জাহাজটির অদূরে ছিল ইউরোপীয় ইউনিয়নের নৌবাহিনীর যুদ্ধজাহাজ। স্থলভাগে ছিল সোমালিয়ার পান্টল্যান্ড পুলিশের টহল।
জাহাজটির মালিকপক্ষ কেএসআরএম গ্রুপের উপব্যবস্থাপনা পরিচালক শাহরিয়ার জাহান জাহাজটি মুক্ত হওয়া এবং যুদ্ধজাহাজের পাহারায় জাহাজটি সোমালিয়া উপকূল ত্যাগ করার খবর জানান। তবে মুক্তিপণ নিয়ে কোনো কথা বলেননি তিনি।
গত ১২ মার্চ মোজাম্বিকের মাপুতো বন্দর থেকে সংযুক্ত আরব আমিরাতের আল হারমিয়া বন্দরে যাওয়ার পথে ভারত মহাসাগরে জলদস্যুদের কবলে পড়ে এমভি আবদুল্লাহ। জাহাজটি জিম্মি করার পর সোমালিয়ার গদভজিরান জেলার জেফল উপকূলের কাছে নিয়ে যাওয়া হয়। ৯ দিনের মাথায় দস্যুরা মুক্তিপণের দাবি জানায়। প্রায় দুই সপ্তাহ দর-কষাকষির পর মুক্তিপণের অঙ্ক চূড়ান্ত হয়।
বাংলাদেশ মার্চেন্ট মেরিন অফিসার্স অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি ক্যাপ্টেন আনাম চৌধুরী বলেন, মুক্তিপণ চূড়ান্ত হওয়ার পরই মুক্তিপণের অঙ্ক পৌঁছানোর প্রক্রিয়া শুরু হয়। দস্যুরা নগদ ডলার ছাড়া নাবিকদের মুক্তি দেয় না। সে জন্য উড়োজাহাজে করে নগদ ডলার পৌঁছে দিতে হয় জিম্মি জাহাজের কাছে। আফ্রিকা অঞ্চলে এ রকম ছোট এয়ারক্রাফট পাওয়া যায়, যেগুলো খুব নিচু এলাকা দিয়ে উড়তে পারে।
এর আগে ২০১০ সালে ছিনতাই হওয়া জাহাজ এমভি জাহান মণি ১০০ দিনের মাথায় ছেড়ে দেয় দস্যুরা। ওই সময় মুক্তিপণের অর্থ একইভাবে সোমালিয়ার জলদস্যুদের কাছে পৌঁছে দেওয়া হয়েছিল বলে জানা গেছে।