যত্রতত্র ভরাট বাণিজ্য

লৌহজংয়ে ৮ হাজার হেক্টর আবাদি জমির অর্ধেকেরও বেশি পানির নিচে

যত্রতত্র ভরাট বাণিজ্যের কারণে মুন্সীগঞ্জের লৌহজং উপজেলার অধিকাংশ দুই ও তিন ফসলি আবাদি জমি এখনও পানির নিচে। পাঁচ থেকে দশ বছর আগে যে সমস্ত জমিতে আলু রোপণ করা হতো সেই সমস্ত জমিগুলোতে এখন হাঁটু পানি।

দেশের বৃহত্তম আলু উৎপাদনকারী জেলা  মুন্সীগঞ্জের লৌহজং উপজেলায়ও এক সময় ব্যাপক আকারে আলু চাষ হলেও এখন অনেক জমিতেই থৈ থৈ করছে পানি।  বিগত দুই বছর যাবৎ আলুর ভালো দাম পাওয়ায় অনেক কৃষক আলু চাষে বেশি আগ্রহী হয়ে উঠেছে। মধ্য নভেম্বর থেকে আলু আবাদ মৌসুম শুরু হয়ে গেছে। এখন পুরোপুরি আলু রোপণ মৌসুম চললেও লৌহজং উপজেলার অধিকাংশ জমি জুড়ে বর্ষার পানি জমে রয়েছে।

অপরিকল্পিতভাবে ভরাট বানিজ্যের কারনে বর্ষা ও বৃষ্টির পানি নিষ্কাশনের ব্যবস্থা না থাকায় এ অবস্থার সৃষ্টি হয়েছে।  খাল-নালা দখল ও ভরাট করে স্থাপনা নির্মাণসহ ব্যক্তিগত কাজে ব্যবহার করার কারণে এই উপজেলার এখনো প্রায় ৬ হাজার হেক্টর কৃষি জমি পানির নিচে তলিয়ে রয়েছে বলে কৃষি সংশ্লিষ্টদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে।

বছরে ৬ থেকে ৯ মাস এ সব জমি পানির নিচে থাকে। ফলে তিন ফসলি জমি হওয়া সত্ত্বেও কৃষকরা বছরে একবার এখন অধিকাংশ জমিতে ইরিধান উৎপাদন করছেন। কিছু কিছু জমি পুরোপুরি অনাবাদি হয়ে পরেছে।  এই সমস্যা সমাধানে নেওয়া হয়নি কোনো কার্যকর পদক্ষেপ।

লৌহজং কৃষি অফিস সুত্রে জানা গেছে, উপজেলায় মোট কৃষি জমি ৮ হাজার ৮০০ হেক্টর। এ বছর ৩ হাজার ১ শত ৩৫ হেক্টর জমিতে আলু আবাদের লক্ষ্যমাত্র নিধারণ করা হয়েছে। এই উপজেলায় মাত্র ২০-২৫ হেক্টর কৃষি জমিতে ইতিমধ্যে আলু রোপন করা হয়েছে।

সরেজমিনে গিয়ে দেখাযায় বর্ষার পানি নিষ্কাশন না হওয়ার কারণে  উপজেলার খেদেরপাড়া, খলাপাড়া, কাজিরগাঁও, খিদিরপাড়া, বন সামন্ত, ঘোলতলি, ঢোলুগাঁও ,জোড়পুল, মৌছা মান্দ্রা, কলারবাগ , ধারার হাট, গাঁওদিয়া, বেজগাঁও, কনকসারসহ, নয়াবাড়ি,  ভোগদিয়া, পালগাঁও, এলাকায়  বিস্তীর্ণ কৃষি জমি এখনো পানিতে তলিয়ে রয়েছে।

স্থানীয়রা জানান এ বছর বর্ষা ও পরে  ঘূর্ণিঝড়ে টানা বৃষ্টির প্রভাবের বৃষ্টি কারণে  জমি থেকে বর্ষার পানি না নামায় এ অঞ্চলের কৃষকরা এখন দিশেহারা। বিভিন্ন খাল-বিল, সেতু-কালভার্টের মুখ আটকে মাটি ভরাটের কারণেই এই অঞ্চলের ফসলি জমিগুলো দিনদিন হুমকির মুখে পড়ছে। আবার অনেক খাল উধাও হয়ে গেছে।

এ ব্যাপারে কৃষক আনোয়ার বলেন, “১০ বছর আগেও আমাদের জমিগুলোতে আলু হতো। ঘোড়াদৌড় কাঠপট্টি এলাকায় খাল ভরাট করছে যার কারণে পানি নামতে পারেনা। তাই এখন আলুও হয়না।  প্রভাবশালীরা এসব খাল ভরাট করে ভবন নির্মাণ করছে। এ জন্য এখন আমাদের জমিগুলো পানিতে তালিয়ে আছে।”

ঘোলতলী গ্রামের মোহাম্মদ আলি পাঠান বলেন, “৫ বছর আগেও আমাদের জমিগুলোতে আলু হয়েছে। আগে দুই ফসল হতো। এ সময় আগে আলু চাষ করতাম । এখন জমিতে হাঁটু পানি। খালগুলো ভরাট হয়ে গেছে। যার জন্য আর আলু বোনা সম্ভব হচ্ছেনা। এখন ইরিধান বুনবো।”

ঘোলতলী গ্রামের সোহেল খান বলেন, “আমাদের গ্রাম হতে পয়সাগাঁও হয়ে বালিগাও খাল পর্যন্ত খাল  কেটে দিলে আমরা ঠিকমতো আলু চাষ করতে পারি । ৫ বছর আগেও আমরা এ জমিগুলোতে আলু চাষ করতাম।”

এদিকে বছরের পর বছর ধরে জলাবদ্ধতা বেড়ে চলায় প্রান্তিক চাষিরা খুব চিন্তিত, আবাদ মৌসুম শুরু হলেও বর্ষার পানি না নামায় সময় মত আলুসহ বিভিন্ন রবি ফসলের আবাদ করতে পারছে না। উঁচু জমিতে আগাম স্বল্প পরিসরে চাষাবাদ শুরু হলেও জমিতে বর্ষার পানি থাকায় স্বাভাবিক চাষ বিলম্বিত হচ্ছে। কোন ভাবেই জমির পানি যেন নিষ্কাশন হচ্ছেই না। এতে ফসল আবাদে কৃষকরা বিলম্বনায় পড়েছেন। পানি নিষ্কাশন ব্যবস্থা না থাকায় এ অঞ্চলে ফসল উৎপাদন ব্যাহত হচ্ছে। চাষীদের অভিযোগ জমি সংলগ্ন খালগুলো দখল আর বালু জমে খালগুলো সরু হয়ে গেছে। এতে পানি নিষ্কাশনের প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি হওয়ায় ফসলি জমিতে জমে আছে বর্ষার পানি। তাই এ বছর আলু চাষের বিড়ম্বনা ও আর্থিক ¶তির মুখে পড়বেন বলে আশঙ্কা তাদের।

লৌহজং উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা মো. হাসান-উদ-দৌলা জানান, লৌহজং  উপজেলায় মোট কৃষি জমি পরিমান ৮ হাজার ৮০০ হেক্টর। এরমধ্যে ৩ হাজার ১ শত ৩৫ হেক্টর জমিতে আলু আবাদের লক্ষ্যমাত্র নিধারণ করা হয়েছে। এই উপজেলায় এখন পর্যন্ত মাত্র ২০-২৫ হেক্টর কৃষি জমিতে আলু রোপন করা হয়েছে। এ পর্যন্ত কি পরিমান জমি পানিতে তলিয়ে রয়েছে জানতে চাইলে তিনি বলেন, এর সঠিক পরিসংখ্যান তার কাছে নেই।

এ ব্যাপারে সহকারী প্রকৌশলী (¶ুদ্রসেচ) বিএডিসি অজয় কুমার রায় বলেন, “মুন্সীগঞ্জে ২০২২/২৩ অর্থবছরে আমরা ৩০ কিলোমিটার মতো খাল খনন করছি। ২৩/২৪ অর্থবছরে কোন খাল খণণ হয়নি। তবে ২০২৫ অর্থ বছরে বিশেষ বরাদ্দের মাধ্যমে লৌহজংউপজেলার জাঙ্গালিয়া খাল খণণের প্রজেক্ট নিয়ে আমরা কাজ করছি।”

ট্যাগ:

যত্রতত্র ভরাট বাণিজ্য

লৌহজংয়ে ৮ হাজার হেক্টর আবাদি জমির অর্ধেকেরও বেশি পানির নিচে

প্রকাশঃ 11:20:28 pm, Tuesday, 10 December 2024

যত্রতত্র ভরাট বাণিজ্যের কারণে মুন্সীগঞ্জের লৌহজং উপজেলার অধিকাংশ দুই ও তিন ফসলি আবাদি জমি এখনও পানির নিচে। পাঁচ থেকে দশ বছর আগে যে সমস্ত জমিতে আলু রোপণ করা হতো সেই সমস্ত জমিগুলোতে এখন হাঁটু পানি।

দেশের বৃহত্তম আলু উৎপাদনকারী জেলা  মুন্সীগঞ্জের লৌহজং উপজেলায়ও এক সময় ব্যাপক আকারে আলু চাষ হলেও এখন অনেক জমিতেই থৈ থৈ করছে পানি।  বিগত দুই বছর যাবৎ আলুর ভালো দাম পাওয়ায় অনেক কৃষক আলু চাষে বেশি আগ্রহী হয়ে উঠেছে। মধ্য নভেম্বর থেকে আলু আবাদ মৌসুম শুরু হয়ে গেছে। এখন পুরোপুরি আলু রোপণ মৌসুম চললেও লৌহজং উপজেলার অধিকাংশ জমি জুড়ে বর্ষার পানি জমে রয়েছে।

অপরিকল্পিতভাবে ভরাট বানিজ্যের কারনে বর্ষা ও বৃষ্টির পানি নিষ্কাশনের ব্যবস্থা না থাকায় এ অবস্থার সৃষ্টি হয়েছে।  খাল-নালা দখল ও ভরাট করে স্থাপনা নির্মাণসহ ব্যক্তিগত কাজে ব্যবহার করার কারণে এই উপজেলার এখনো প্রায় ৬ হাজার হেক্টর কৃষি জমি পানির নিচে তলিয়ে রয়েছে বলে কৃষি সংশ্লিষ্টদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে।

বছরে ৬ থেকে ৯ মাস এ সব জমি পানির নিচে থাকে। ফলে তিন ফসলি জমি হওয়া সত্ত্বেও কৃষকরা বছরে একবার এখন অধিকাংশ জমিতে ইরিধান উৎপাদন করছেন। কিছু কিছু জমি পুরোপুরি অনাবাদি হয়ে পরেছে।  এই সমস্যা সমাধানে নেওয়া হয়নি কোনো কার্যকর পদক্ষেপ।

লৌহজং কৃষি অফিস সুত্রে জানা গেছে, উপজেলায় মোট কৃষি জমি ৮ হাজার ৮০০ হেক্টর। এ বছর ৩ হাজার ১ শত ৩৫ হেক্টর জমিতে আলু আবাদের লক্ষ্যমাত্র নিধারণ করা হয়েছে। এই উপজেলায় মাত্র ২০-২৫ হেক্টর কৃষি জমিতে ইতিমধ্যে আলু রোপন করা হয়েছে।

সরেজমিনে গিয়ে দেখাযায় বর্ষার পানি নিষ্কাশন না হওয়ার কারণে  উপজেলার খেদেরপাড়া, খলাপাড়া, কাজিরগাঁও, খিদিরপাড়া, বন সামন্ত, ঘোলতলি, ঢোলুগাঁও ,জোড়পুল, মৌছা মান্দ্রা, কলারবাগ , ধারার হাট, গাঁওদিয়া, বেজগাঁও, কনকসারসহ, নয়াবাড়ি,  ভোগদিয়া, পালগাঁও, এলাকায়  বিস্তীর্ণ কৃষি জমি এখনো পানিতে তলিয়ে রয়েছে।

স্থানীয়রা জানান এ বছর বর্ষা ও পরে  ঘূর্ণিঝড়ে টানা বৃষ্টির প্রভাবের বৃষ্টি কারণে  জমি থেকে বর্ষার পানি না নামায় এ অঞ্চলের কৃষকরা এখন দিশেহারা। বিভিন্ন খাল-বিল, সেতু-কালভার্টের মুখ আটকে মাটি ভরাটের কারণেই এই অঞ্চলের ফসলি জমিগুলো দিনদিন হুমকির মুখে পড়ছে। আবার অনেক খাল উধাও হয়ে গেছে।

এ ব্যাপারে কৃষক আনোয়ার বলেন, “১০ বছর আগেও আমাদের জমিগুলোতে আলু হতো। ঘোড়াদৌড় কাঠপট্টি এলাকায় খাল ভরাট করছে যার কারণে পানি নামতে পারেনা। তাই এখন আলুও হয়না।  প্রভাবশালীরা এসব খাল ভরাট করে ভবন নির্মাণ করছে। এ জন্য এখন আমাদের জমিগুলো পানিতে তালিয়ে আছে।”

ঘোলতলী গ্রামের মোহাম্মদ আলি পাঠান বলেন, “৫ বছর আগেও আমাদের জমিগুলোতে আলু হয়েছে। আগে দুই ফসল হতো। এ সময় আগে আলু চাষ করতাম । এখন জমিতে হাঁটু পানি। খালগুলো ভরাট হয়ে গেছে। যার জন্য আর আলু বোনা সম্ভব হচ্ছেনা। এখন ইরিধান বুনবো।”

ঘোলতলী গ্রামের সোহেল খান বলেন, “আমাদের গ্রাম হতে পয়সাগাঁও হয়ে বালিগাও খাল পর্যন্ত খাল  কেটে দিলে আমরা ঠিকমতো আলু চাষ করতে পারি । ৫ বছর আগেও আমরা এ জমিগুলোতে আলু চাষ করতাম।”

এদিকে বছরের পর বছর ধরে জলাবদ্ধতা বেড়ে চলায় প্রান্তিক চাষিরা খুব চিন্তিত, আবাদ মৌসুম শুরু হলেও বর্ষার পানি না নামায় সময় মত আলুসহ বিভিন্ন রবি ফসলের আবাদ করতে পারছে না। উঁচু জমিতে আগাম স্বল্প পরিসরে চাষাবাদ শুরু হলেও জমিতে বর্ষার পানি থাকায় স্বাভাবিক চাষ বিলম্বিত হচ্ছে। কোন ভাবেই জমির পানি যেন নিষ্কাশন হচ্ছেই না। এতে ফসল আবাদে কৃষকরা বিলম্বনায় পড়েছেন। পানি নিষ্কাশন ব্যবস্থা না থাকায় এ অঞ্চলে ফসল উৎপাদন ব্যাহত হচ্ছে। চাষীদের অভিযোগ জমি সংলগ্ন খালগুলো দখল আর বালু জমে খালগুলো সরু হয়ে গেছে। এতে পানি নিষ্কাশনের প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি হওয়ায় ফসলি জমিতে জমে আছে বর্ষার পানি। তাই এ বছর আলু চাষের বিড়ম্বনা ও আর্থিক ¶তির মুখে পড়বেন বলে আশঙ্কা তাদের।

লৌহজং উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা মো. হাসান-উদ-দৌলা জানান, লৌহজং  উপজেলায় মোট কৃষি জমি পরিমান ৮ হাজার ৮০০ হেক্টর। এরমধ্যে ৩ হাজার ১ শত ৩৫ হেক্টর জমিতে আলু আবাদের লক্ষ্যমাত্র নিধারণ করা হয়েছে। এই উপজেলায় এখন পর্যন্ত মাত্র ২০-২৫ হেক্টর কৃষি জমিতে আলু রোপন করা হয়েছে। এ পর্যন্ত কি পরিমান জমি পানিতে তলিয়ে রয়েছে জানতে চাইলে তিনি বলেন, এর সঠিক পরিসংখ্যান তার কাছে নেই।

এ ব্যাপারে সহকারী প্রকৌশলী (¶ুদ্রসেচ) বিএডিসি অজয় কুমার রায় বলেন, “মুন্সীগঞ্জে ২০২২/২৩ অর্থবছরে আমরা ৩০ কিলোমিটার মতো খাল খনন করছি। ২৩/২৪ অর্থবছরে কোন খাল খণণ হয়নি। তবে ২০২৫ অর্থ বছরে বিশেষ বরাদ্দের মাধ্যমে লৌহজংউপজেলার জাঙ্গালিয়া খাল খণণের প্রজেক্ট নিয়ে আমরা কাজ করছি।”