পরিবেশবাদীদের তোপের মুখে উপদেষ্টা

নারায়ণগঞ্জে বিআইডব্লিউটিএ’র একটি প্রকল্প পরিদর্শনে এসে ‘শীতলক্ষ্যা পাড়ের গাছ রক্ষায় নারায়ণগঞ্জবাসী’ সংগঠনের সদস্যদের তোপের মুখে পড়েছেন অন্তর্র্বর্তী সরকারের উপদেষ্টা ব্রিগেডিয়ার জেনারেল (অব) এম সাখাওয়াত হোসেন। এ সময় তারা শীতলক্ষ্যা ও নদী পাড়ের গাছ রক্ষার দাবি জানালে তাদের দাবির সাথে একত্মতা প্রকাশ করেন উপদেষ্টা এবং ক্ষতিপূরণের আশ্বাস দেন।

মঙ্গলবার (৩ ডিসেম্বর) দুপুরে শীতলক্ষ্যার পাড়ে শহরের ৩ নম্বর মাছঘাট এলাকায় এ ঘটনা ঘটে।

এর আগে সকালে ‘বাংলাদেশ আঞ্চলিক অভ্যন্তরীণ নৌ-পরিবহন প্রকল্প-১ (চট্টগ্রাম-ঢাকা-আশুগঞ্জ ও সংযুক্ত নৌ-পথ খনন এবং টার্মিনালসহ আনুষঙ্গিক স্থাপনাদি নির্মাণ) প্রকল্পের আওতায় নারায়ণগঞ্জ নদীবন্দরের টার্মিনাল ভবন ও মাল্টিপারপাস টার্মিনাল নির্মাণ কাজ পরিদর্শনে আসেন উপদেষ্টা এম সাখাওয়াত হোসেন।

জুলাই-আগস্টের অভ্যুত্থানে পতন হওয়া আওয়ামী লীগ সরকারের সময় হাতে নেওয়া বিশ্ব ব্যাংকের অর্থায়নে এই প্রকল্পের অধীনে শীতলক্ষ্যা নদীর পাড়ের অর্ধশতাধিক পুরোনো গাছ কেটে ফেলা হয়। এ নিয়ে বিগত সরকারের আমলেও আন্দোলন করেছে স্থানীয় সংস্কৃতি কর্মী ও পরিবেশবাদীরা।

আন্দোলনকারীদের একটি দল মঙ্গলবার দুপুরে নৌ পরিবহন মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টার সাথে তাদের উদ্বেগের কথা জানান। এই সময় আন্দোলনকারীরা সাখাওয়াত হোসেনের সাথে তর্কেও জড়ান। পরে আন্দোলনকারীদের শীতলক্ষ্যা নদীর দূষণ ও দখল রোধে পদক্ষেপ নেওয়ার আশ্বাস দেন উপদেষ্টা সাখাওয়াত।

এ সময় ‘শীতলক্ষ্যা পাড়ের গাছ ও নদী রক্ষায় নারায়ণগঞ্জবাসী’ সংগঠনের সমন্বয়ক কবি আরিফ বুলবুল, সদস্যসচিব শুভ দেব, গণসংহতি আন্দোলনের জেলা কমিটির নির্বাহী সমন্বয়কারী অঞ্জন দাস, মহানগর কমিটির সমন্বয়কারী নিয়ামুর রশীদ বিপ্লব, প্রথম আলো বন্ধুসভার নারায়ণগঞ্জ জেলা কমিটির সাধারণ সম্পাদক জহিরুল ইসলাম মিন্টু উপস্থিত ছিলেন।

কবি আরিফ বুলবুল সাংবাদিকদের বলেন, ‘বিআইডব্লিউটিএ এ প্রকল্পের মধ্য দিয়ে তারা নদীর উন্নয়ন করবে। কিন্তু আমাদের প্রশ্ন হলো, নদীর প্রবাহ বাধাগ্রস্ত করে, নদী পাড়ের গাছ কেটে, নদী ভরাট করে তারা নদীর কেমন উন্নয়ন করবে? এটা উন্নয়ন নয়, এটা ক্ষতি সাধন। তাই আমরা আগেও আন্দোলন করেছি আর আজ উপদেষ্টার সাথে এ নিয়ে কথা বলেছি।’

তিনি আরও বলেন, ‘উপদেষ্টা মহোদয় আমাদের দাবির সাথে একমত প্রকাশ করেছেন। তিনি কথা দিয়েছেন, শীতলক্ষ্যা দূষণ, লুন্ঠন বন্ধ করবেন। এবং শীতলক্ষ্যা পাড়ের গাছ কাটায় পরিবেশের যে ক্ষতি হয়েছে তিনি সে ক্ষতি পূরণ করার চেষ্টা করবেন বলে আমাদের আশ্বস্ত করেছেন। আমরা তার কথায় আস্থা রাখতে চাই। যদি এর ব্যতিক্রম ঘটে আমরা এ বিষয়ে ফের আন্দোলনে যাবো।’

এ প্রসঙ্গে পরে সাংবাদিকদের সাথেও কথা বলেন উপদেষ্টা সাখাওয়াত হোসেন। তিনি বলেন, ‘নারায়ণগঞ্জে এক সময় পাটের ব্যবসা ছিল। এটাকে প্রাচ্যের ডান্ডি বলা হতো। এখন পাট না থাকলেও নানা ধরনের ব্যবসা হচ্ছে। এখানে বিশ্ব ব্যাংকের প্রজেক্টে একটি নতুন টার্মিনাল ভবন হচ্ছে। আমি এখানে এসে না দেখলে এই টার্মিনাল ভবনটি সময়মতো ঠিকঠাকমতো উঠবে না। অলরেডি আমরা পিছিয়ে আছি। এই কাজে যদি বাধা আসে তাহলে তো আর এ কাজ হবে না।’

তিনি আরও বলেন, ‘বিশ্ব ব্যাংক কোনো জায়গায় কোনোকিছু করলে পুরোপুরি পরিকল্পনা করে নেয়। এখানে গাছ লাগবে কি লাগবে না, সেটাও দেখে। এমনি এমনি পয়সা দিয়ে দেয় না। পরিবেশ সম্বন্ধে আমরাও অনেক সচেতন, আমি নিজেও ব্যক্তিগতভাবে (সচেতন)। কাজেই ওনাদের এত হৈ-চৈ করার কোনো দরকার ছিল না। জায়গাটা হবে, তারপর কী গাছ হবে, না হবে সেইটা বিশেষজ্ঞরা দেখবেন। কাজেই এই সমস্ত কথাবার্তা বলে লাভ নেই। ডেভেলপমেন্টটা হবে, ডেভেলপমেন্ট পরিবেশেরও হবে।’

নদী দূষণ ও দখলরোধে পরিবেশ মন্ত্রণালয়ের সাথে সমন্বিতভাবে কাজ করবেন বলেও জানান তিনি।

তিনি বলেন, ‘নদীর এখন এমন এমন জায়গা দখল করেছে, যেখানে চারতলা-পাঁচতলা-ছয়তলা-সাততলা ভবন করে ফেলেছে। এখন এইটাতে হাত দিতে গেলে আবার আপনারা পেছনে পড়বেন। মুশকিল তো এইখানে। আমরা ন্যায্য কাজ করতে গেলেও বাধা আসে।’

প্রকল্প এলাকার পাশে শহরের বৃহৎ মাছের বাজারের ব্যবসায়ীদের জন্য ছাউনি করে দেওয়ার কথা জানিয়ে তিনি বলেন, কাউকে উৎখাত করা হবে না।

প্রসঙ্গত, চলতি বছরের প্রথমে বাংলাদেশ আঞ্চলিক অভ্যন্তরীণ নৌ-পরিবহন প্রকল্প-১ এর অধীনে নারায়ণগঞ্জ নদীবন্দরের টার্মিনাল ভবন ও মাল্টিপারপাস টার্মিনাল নির্মাণের প্রকল্পের কাজ শুরু করে বিআইডব্লিউটিএ। এর জন্য নামমাত্র মূল্যে শীতলক্ষ্যা পাড়ের ৮১টি গাছ বিক্রি করে দেয় কর্তৃপক্ষ। যার মধ্যে ৪০ বছরেরও বেশি বয়সের গাছও ছিল। এতে প্রতিবাদ জানায় নারায়ণগঞ্জের পরিবেশবাদী, সাংস্কৃতিক ও রাজনৈতিক কর্মীরা। সে সময় তারা গাছ কাটার প্রতিবাদ ‘শীতলক্ষ্যা পাড়ের গাছ রক্ষায় নারায়ণগঞ্জবাসী’ নামে একটি সংগঠন গঠন করে টানা দেড় মাস আন্দোলন করে। আন্দোলনের প্রেক্ষিতে বিআইডব্লিউটিএ একটি আলোচনা সভার আয়োজন করলেও উল্লেখযোগ্য কোনো পদক্ষেপ গ্রহণ করেনি।

ট্যাগ:

সারাদেশে সাদপন্থীদের কার্যক্রম বন্ধ এবং বিচারের দাবীতে ওলামা মাশায়েখদের সংবাদ সম্মেলন

পরিবেশবাদীদের তোপের মুখে উপদেষ্টা

প্রকাশঃ 07:00:43 pm, Tuesday, 3 December 2024

নারায়ণগঞ্জে বিআইডব্লিউটিএ’র একটি প্রকল্প পরিদর্শনে এসে ‘শীতলক্ষ্যা পাড়ের গাছ রক্ষায় নারায়ণগঞ্জবাসী’ সংগঠনের সদস্যদের তোপের মুখে পড়েছেন অন্তর্র্বর্তী সরকারের উপদেষ্টা ব্রিগেডিয়ার জেনারেল (অব) এম সাখাওয়াত হোসেন। এ সময় তারা শীতলক্ষ্যা ও নদী পাড়ের গাছ রক্ষার দাবি জানালে তাদের দাবির সাথে একত্মতা প্রকাশ করেন উপদেষ্টা এবং ক্ষতিপূরণের আশ্বাস দেন।

মঙ্গলবার (৩ ডিসেম্বর) দুপুরে শীতলক্ষ্যার পাড়ে শহরের ৩ নম্বর মাছঘাট এলাকায় এ ঘটনা ঘটে।

এর আগে সকালে ‘বাংলাদেশ আঞ্চলিক অভ্যন্তরীণ নৌ-পরিবহন প্রকল্প-১ (চট্টগ্রাম-ঢাকা-আশুগঞ্জ ও সংযুক্ত নৌ-পথ খনন এবং টার্মিনালসহ আনুষঙ্গিক স্থাপনাদি নির্মাণ) প্রকল্পের আওতায় নারায়ণগঞ্জ নদীবন্দরের টার্মিনাল ভবন ও মাল্টিপারপাস টার্মিনাল নির্মাণ কাজ পরিদর্শনে আসেন উপদেষ্টা এম সাখাওয়াত হোসেন।

জুলাই-আগস্টের অভ্যুত্থানে পতন হওয়া আওয়ামী লীগ সরকারের সময় হাতে নেওয়া বিশ্ব ব্যাংকের অর্থায়নে এই প্রকল্পের অধীনে শীতলক্ষ্যা নদীর পাড়ের অর্ধশতাধিক পুরোনো গাছ কেটে ফেলা হয়। এ নিয়ে বিগত সরকারের আমলেও আন্দোলন করেছে স্থানীয় সংস্কৃতি কর্মী ও পরিবেশবাদীরা।

আন্দোলনকারীদের একটি দল মঙ্গলবার দুপুরে নৌ পরিবহন মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টার সাথে তাদের উদ্বেগের কথা জানান। এই সময় আন্দোলনকারীরা সাখাওয়াত হোসেনের সাথে তর্কেও জড়ান। পরে আন্দোলনকারীদের শীতলক্ষ্যা নদীর দূষণ ও দখল রোধে পদক্ষেপ নেওয়ার আশ্বাস দেন উপদেষ্টা সাখাওয়াত।

এ সময় ‘শীতলক্ষ্যা পাড়ের গাছ ও নদী রক্ষায় নারায়ণগঞ্জবাসী’ সংগঠনের সমন্বয়ক কবি আরিফ বুলবুল, সদস্যসচিব শুভ দেব, গণসংহতি আন্দোলনের জেলা কমিটির নির্বাহী সমন্বয়কারী অঞ্জন দাস, মহানগর কমিটির সমন্বয়কারী নিয়ামুর রশীদ বিপ্লব, প্রথম আলো বন্ধুসভার নারায়ণগঞ্জ জেলা কমিটির সাধারণ সম্পাদক জহিরুল ইসলাম মিন্টু উপস্থিত ছিলেন।

কবি আরিফ বুলবুল সাংবাদিকদের বলেন, ‘বিআইডব্লিউটিএ এ প্রকল্পের মধ্য দিয়ে তারা নদীর উন্নয়ন করবে। কিন্তু আমাদের প্রশ্ন হলো, নদীর প্রবাহ বাধাগ্রস্ত করে, নদী পাড়ের গাছ কেটে, নদী ভরাট করে তারা নদীর কেমন উন্নয়ন করবে? এটা উন্নয়ন নয়, এটা ক্ষতি সাধন। তাই আমরা আগেও আন্দোলন করেছি আর আজ উপদেষ্টার সাথে এ নিয়ে কথা বলেছি।’

তিনি আরও বলেন, ‘উপদেষ্টা মহোদয় আমাদের দাবির সাথে একমত প্রকাশ করেছেন। তিনি কথা দিয়েছেন, শীতলক্ষ্যা দূষণ, লুন্ঠন বন্ধ করবেন। এবং শীতলক্ষ্যা পাড়ের গাছ কাটায় পরিবেশের যে ক্ষতি হয়েছে তিনি সে ক্ষতি পূরণ করার চেষ্টা করবেন বলে আমাদের আশ্বস্ত করেছেন। আমরা তার কথায় আস্থা রাখতে চাই। যদি এর ব্যতিক্রম ঘটে আমরা এ বিষয়ে ফের আন্দোলনে যাবো।’

এ প্রসঙ্গে পরে সাংবাদিকদের সাথেও কথা বলেন উপদেষ্টা সাখাওয়াত হোসেন। তিনি বলেন, ‘নারায়ণগঞ্জে এক সময় পাটের ব্যবসা ছিল। এটাকে প্রাচ্যের ডান্ডি বলা হতো। এখন পাট না থাকলেও নানা ধরনের ব্যবসা হচ্ছে। এখানে বিশ্ব ব্যাংকের প্রজেক্টে একটি নতুন টার্মিনাল ভবন হচ্ছে। আমি এখানে এসে না দেখলে এই টার্মিনাল ভবনটি সময়মতো ঠিকঠাকমতো উঠবে না। অলরেডি আমরা পিছিয়ে আছি। এই কাজে যদি বাধা আসে তাহলে তো আর এ কাজ হবে না।’

তিনি আরও বলেন, ‘বিশ্ব ব্যাংক কোনো জায়গায় কোনোকিছু করলে পুরোপুরি পরিকল্পনা করে নেয়। এখানে গাছ লাগবে কি লাগবে না, সেটাও দেখে। এমনি এমনি পয়সা দিয়ে দেয় না। পরিবেশ সম্বন্ধে আমরাও অনেক সচেতন, আমি নিজেও ব্যক্তিগতভাবে (সচেতন)। কাজেই ওনাদের এত হৈ-চৈ করার কোনো দরকার ছিল না। জায়গাটা হবে, তারপর কী গাছ হবে, না হবে সেইটা বিশেষজ্ঞরা দেখবেন। কাজেই এই সমস্ত কথাবার্তা বলে লাভ নেই। ডেভেলপমেন্টটা হবে, ডেভেলপমেন্ট পরিবেশেরও হবে।’

নদী দূষণ ও দখলরোধে পরিবেশ মন্ত্রণালয়ের সাথে সমন্বিতভাবে কাজ করবেন বলেও জানান তিনি।

তিনি বলেন, ‘নদীর এখন এমন এমন জায়গা দখল করেছে, যেখানে চারতলা-পাঁচতলা-ছয়তলা-সাততলা ভবন করে ফেলেছে। এখন এইটাতে হাত দিতে গেলে আবার আপনারা পেছনে পড়বেন। মুশকিল তো এইখানে। আমরা ন্যায্য কাজ করতে গেলেও বাধা আসে।’

প্রকল্প এলাকার পাশে শহরের বৃহৎ মাছের বাজারের ব্যবসায়ীদের জন্য ছাউনি করে দেওয়ার কথা জানিয়ে তিনি বলেন, কাউকে উৎখাত করা হবে না।

প্রসঙ্গত, চলতি বছরের প্রথমে বাংলাদেশ আঞ্চলিক অভ্যন্তরীণ নৌ-পরিবহন প্রকল্প-১ এর অধীনে নারায়ণগঞ্জ নদীবন্দরের টার্মিনাল ভবন ও মাল্টিপারপাস টার্মিনাল নির্মাণের প্রকল্পের কাজ শুরু করে বিআইডব্লিউটিএ। এর জন্য নামমাত্র মূল্যে শীতলক্ষ্যা পাড়ের ৮১টি গাছ বিক্রি করে দেয় কর্তৃপক্ষ। যার মধ্যে ৪০ বছরেরও বেশি বয়সের গাছও ছিল। এতে প্রতিবাদ জানায় নারায়ণগঞ্জের পরিবেশবাদী, সাংস্কৃতিক ও রাজনৈতিক কর্মীরা। সে সময় তারা গাছ কাটার প্রতিবাদ ‘শীতলক্ষ্যা পাড়ের গাছ রক্ষায় নারায়ণগঞ্জবাসী’ নামে একটি সংগঠন গঠন করে টানা দেড় মাস আন্দোলন করে। আন্দোলনের প্রেক্ষিতে বিআইডব্লিউটিএ একটি আলোচনা সভার আয়োজন করলেও উল্লেখযোগ্য কোনো পদক্ষেপ গ্রহণ করেনি।