দেওয়ানবাগ দরবার হামলা, ভাংচুর ও অগ্নিসংযোগ

আসন্ন পবিত্র ঈদে মিলাদুন্নবী (স:) উদযাপন উপলক্ষে প্রস্তুতি সভা ও মিলাদ মাহফিলের আয়োজন করায় নারায়ণগঞ্জের বন্দরে দেওয়ানবাগ দরবার শরীফে হামলা চালিয়ে ভাংচুর, লুটপাট ও অগ্নিসংযোগ করা হয়েছে। শুক্রবার (৬ সেপ্টেম্বর) ফজরের নামাজের পর স্থানীয় মসজিদের মাইকে ঘোষণা দিয়ে এলাকাবাসি ও দূর্বৃত্তরা এই হামলা চালায় বলে অভিযোগ দরবার শরীরের অনুসারিদের।

জানা যায়, ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কের পাশে বন্দর উপজেলার দেওয়ানবাগ এলাকায় অবস্থিত দেওয়ানবাগ এলাকায় জমি কিনে ১৯৮৫ সালে দেওয়ানবাগ দরবার শরীফ প্রতিষ্ঠা করেন সূফীসম্রাট হযরত মাহবুব এ খোদা দেওয়ানবাগী হুজুর। এরপর থেকে দীর্ঘ তিন দশকের বেশি সময় ধরে সেখানে ধর্মীয় কার্যক্রম পরিচালিত হয়ে আসছে।

পুলিশ ও প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, আগামি ১৬ সেপ্টেম্বর পবিত্র ঈদে মিলাদুন্নবী (স:) উদযাপনের বিষয়ে শুক্রবার (৬ সেপ্টেম্বর) দেওয়ানবাগ দরবার শরীফে জুম্মার নামাজের পর প্রস্তুতিমূলক সভা ও মিলাদ মাহফিল করার কথা ছিল। বিষয়টি ছড়িয়ে পড়লে ঈদে মিলাদুন্নবী বিরোধি স্থানীয় লোকজন বৃহস্পতিবার সন্ধ্যা থেকে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে নানা ধরণের পোস্ট দেন। এ নিয়ে এলাকাবাসির মধ্যে রাত থেকেই উত্তেজনা চলছিল।

তারা আরও জানান, শুক্রবার (৬ সেপ্টেম্বর) ফজরের নামাজের পর আশপাশের মসজিদের মাইকে ঘোষণা দিয়ে দেওয়ানবাগ দরবার শরীফে হামলা চালানো হয়। এ সময় স্থানীয় লোকজন ও দূর্বৃত্তরা প্রধান ফটক ভেঙ্গে ভেতরে প্রবেশ করে বিভিন্ন স্থাপনা ভাংচুর ও লুটপাট করে।

পরে দুটি টিনের ঘর সহ কয়েকটি পাকা স্থাপনায় আগুন ধরিয়ে দেয় তারা। হামলায় আহত হন অন্তত ২০ জন মুসুল্লি। খবর পেয়ে ফায়ার সার্ভিসের দুইটি ইউনিট গিয়ে আগুন নেভায় এবং বন্দর থানা পুলিশ পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রনে আনে।

নারায়ণগঞ্জ ফায়ার সার্ভিস এন্ড সিভিল ডিফেন্সের উপসহকারি পরিচালক বলেন, দরবার শরীফের ভেতরে টিনের ঘর সহ পাকা বিল্ডিং সহ প্রায় সবগুলো স্থাপনায় আগুন দেয়া হয়। খবর পেয়ে আমাদের দুইটি ইউনিট গয়ে আগুন নিয়ন্ত্রন করে।

বন্দর থানার ওসি আবু বকর সিদ্দিক জানান, শুক্রবার ফজরের নামাজের পর মসজিদের মাইকে ঘোষণা করে স্থানীয় লোকজন দেওয়ানবাগ দরবার শরীফে হামলা চালিয়ে ভাংচুর, লুটপাট ও অগ্নিসংযোগ করে।

পরে খবর পেয়ে পুলিশ গিয়ে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনে। তবে এ ঘটনায় এখন পর্যন্ত কেউ থানায় অভিযোগ দায়ের করেনি। অভিযোগ দিলে আইনগত ব্যবস্থা নেয়া হবে।

দুপুরে জেলা পুলিশ সুপার প্রত্যুষ কুমার মজুমদার কয়েকজন অতিরিক্ত পুলিশ সুপারকে নিয়ে দরবার শরীফ পরিদর্শন করেন। ঘটনার নিন্দা জানিয়ে পুলিশ সুপার বলেন, এটি খুবই ন্যাক্কারজনক একটি ঘটনা। পরবর্তীতে আর যেন এমন ঘটনার পুনরাবৃত্তি না ঘটে তার জন্য পুলিশ প্রশাসন তৎপর রয়েছে। এ ঘটনায় জড়িতদের আইনের আওতায় আনা হবে বলেও জানান তিনি।

এসময় সাথে ছিলেন অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (অপরাধ) চাইলাউ মারমা, জেলা গোয়েন্দা (ডিবি) পুলিশের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার মো: তরীকুল ইসলাম ও বন্দর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আবু বকর সিদ্দিক।

ট্যাগ:
জনপ্রিয় পোস্ট

দেওয়ানবাগ দরবার হামলা, ভাংচুর ও অগ্নিসংযোগ

প্রকাশঃ 03:17:34 pm, Friday, 6 September 2024

আসন্ন পবিত্র ঈদে মিলাদুন্নবী (স:) উদযাপন উপলক্ষে প্রস্তুতি সভা ও মিলাদ মাহফিলের আয়োজন করায় নারায়ণগঞ্জের বন্দরে দেওয়ানবাগ দরবার শরীফে হামলা চালিয়ে ভাংচুর, লুটপাট ও অগ্নিসংযোগ করা হয়েছে। শুক্রবার (৬ সেপ্টেম্বর) ফজরের নামাজের পর স্থানীয় মসজিদের মাইকে ঘোষণা দিয়ে এলাকাবাসি ও দূর্বৃত্তরা এই হামলা চালায় বলে অভিযোগ দরবার শরীরের অনুসারিদের।

জানা যায়, ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কের পাশে বন্দর উপজেলার দেওয়ানবাগ এলাকায় অবস্থিত দেওয়ানবাগ এলাকায় জমি কিনে ১৯৮৫ সালে দেওয়ানবাগ দরবার শরীফ প্রতিষ্ঠা করেন সূফীসম্রাট হযরত মাহবুব এ খোদা দেওয়ানবাগী হুজুর। এরপর থেকে দীর্ঘ তিন দশকের বেশি সময় ধরে সেখানে ধর্মীয় কার্যক্রম পরিচালিত হয়ে আসছে।

পুলিশ ও প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, আগামি ১৬ সেপ্টেম্বর পবিত্র ঈদে মিলাদুন্নবী (স:) উদযাপনের বিষয়ে শুক্রবার (৬ সেপ্টেম্বর) দেওয়ানবাগ দরবার শরীফে জুম্মার নামাজের পর প্রস্তুতিমূলক সভা ও মিলাদ মাহফিল করার কথা ছিল। বিষয়টি ছড়িয়ে পড়লে ঈদে মিলাদুন্নবী বিরোধি স্থানীয় লোকজন বৃহস্পতিবার সন্ধ্যা থেকে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে নানা ধরণের পোস্ট দেন। এ নিয়ে এলাকাবাসির মধ্যে রাত থেকেই উত্তেজনা চলছিল।

তারা আরও জানান, শুক্রবার (৬ সেপ্টেম্বর) ফজরের নামাজের পর আশপাশের মসজিদের মাইকে ঘোষণা দিয়ে দেওয়ানবাগ দরবার শরীফে হামলা চালানো হয়। এ সময় স্থানীয় লোকজন ও দূর্বৃত্তরা প্রধান ফটক ভেঙ্গে ভেতরে প্রবেশ করে বিভিন্ন স্থাপনা ভাংচুর ও লুটপাট করে।

পরে দুটি টিনের ঘর সহ কয়েকটি পাকা স্থাপনায় আগুন ধরিয়ে দেয় তারা। হামলায় আহত হন অন্তত ২০ জন মুসুল্লি। খবর পেয়ে ফায়ার সার্ভিসের দুইটি ইউনিট গিয়ে আগুন নেভায় এবং বন্দর থানা পুলিশ পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রনে আনে।

নারায়ণগঞ্জ ফায়ার সার্ভিস এন্ড সিভিল ডিফেন্সের উপসহকারি পরিচালক বলেন, দরবার শরীফের ভেতরে টিনের ঘর সহ পাকা বিল্ডিং সহ প্রায় সবগুলো স্থাপনায় আগুন দেয়া হয়। খবর পেয়ে আমাদের দুইটি ইউনিট গয়ে আগুন নিয়ন্ত্রন করে।

বন্দর থানার ওসি আবু বকর সিদ্দিক জানান, শুক্রবার ফজরের নামাজের পর মসজিদের মাইকে ঘোষণা করে স্থানীয় লোকজন দেওয়ানবাগ দরবার শরীফে হামলা চালিয়ে ভাংচুর, লুটপাট ও অগ্নিসংযোগ করে।

পরে খবর পেয়ে পুলিশ গিয়ে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনে। তবে এ ঘটনায় এখন পর্যন্ত কেউ থানায় অভিযোগ দায়ের করেনি। অভিযোগ দিলে আইনগত ব্যবস্থা নেয়া হবে।

দুপুরে জেলা পুলিশ সুপার প্রত্যুষ কুমার মজুমদার কয়েকজন অতিরিক্ত পুলিশ সুপারকে নিয়ে দরবার শরীফ পরিদর্শন করেন। ঘটনার নিন্দা জানিয়ে পুলিশ সুপার বলেন, এটি খুবই ন্যাক্কারজনক একটি ঘটনা। পরবর্তীতে আর যেন এমন ঘটনার পুনরাবৃত্তি না ঘটে তার জন্য পুলিশ প্রশাসন তৎপর রয়েছে। এ ঘটনায় জড়িতদের আইনের আওতায় আনা হবে বলেও জানান তিনি।

এসময় সাথে ছিলেন অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (অপরাধ) চাইলাউ মারমা, জেলা গোয়েন্দা (ডিবি) পুলিশের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার মো: তরীকুল ইসলাম ও বন্দর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আবু বকর সিদ্দিক।