সোম. সেপ্টে ২৩, ২০২৪

ইজারার আগেই কলেজ মাঠে পশু হাটের প্রস্তুতি

প্রশাসনের ইজারা বিজ্ঞপ্তির আগেই নারায়ণগঞ্জের সোনারগাঁ সরকারি কলেজ মাঠে অস্থায়ী কোরবানির পশুর হাট বসানোর প্রস্তুতি শেষ করেছে স্থানীয় আওয়ামী লীগ নেতাদের একটি সিন্ডিকেট।

মোগরাপাড়া ইউনিয়নের শতাধিক আওয়ামী নেতা সিন্ডিকেট করে কলেজ মাঠে এই হাট বসানোর কাজ শেষ করেছেন। তবে উপজেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে এখন পর্যন্ত কোনো কোরবানির পশুর হাটের ইজারা বিজ্ঞপ্তি দেওয়া হয়নি বলে জানিয়েছেন এক কর্মকর্তা। প্রভাব বিস্তার করে এ হাট বসানো হচ্ছে বলে অভিযোগ উঠেছে। উপজেলা প্রশাসন হাটের শিডিউল বিক্রি কিংবা ইজারাদার নির্ধারণ না করলেও এরই মধ্যে কলেজের অনার্স শাখার মাঠে বাঁশের খুঁটি পুঁতে হাটের প্রস্তুতি শেষ করেছে সিন্ডিকেট।

জানা যায়, উপজেলার বিভিন্ন স্থানে প্রতিবছর ১৭টি অস্থায়ী পশুর হাটের শিডিউল বিক্রির মাধ্যমে ইজারা দিয়ে থাকে উপজেলা প্রশাসন। সরকারি বিধিমালা অনুযায়ী, ঈদুল আজহার এক সপ্তাহ আগে জেলা প্রশাসনের অনুমতি নিয়ে অস্থায়ী কোরবানির পশুর হাটের ইজারা দেওয়া হয়। এ বছর উপজেলা প্রশাসন এখন পর্যন্ত কাউকে অস্থায়ী পশুর হাট বসানোর কোনো অনুমতি দেয়নি। অনুমতি দেওয়া না হলেও সোনারগাঁ সরকারি কলেজ মাঠে আওয়ামী লীগ নেতা সাইফুল ইসলাম বাবুর নেতৃত্বে একটি সিন্ডিকেট বাঁশ পুঁতে প্যান্ডেল করে হাট বসানোর প্রাথমিক কাজ শেষ করেছে।
গতকাল শনিবার সোনারগাঁ সরকারি কলেজ মাঠে গিয়ে দেখা যায়, হাট বসানোর বিভিন্ন উপকরণ দিয়ে বাঁশের খুঁটি পুঁতে সারিবদ্ধভাবে প্রস্তুত করা হয়েছে গরু-ছাগল বাঁধার স্থান। রোদ-বৃষ্টিতে পশুর নিরাপত্তা দেওয়ার জন্য বাঁশের খুঁটির ওপরে রয়েছে প্যান্ডেল।
হাট প্রস্তুত করার কাজে নিয়োজিত শ্রমিকরা জানান, দৈনিক মজুরিতে মাঠে কাজ করছেন। হাট কর্তৃপক্ষ কলেজ মাঠে তাদের বাঁশ পুঁতে খুঁটি দিয়ে হাট প্রস্তুত করতে বলেছে। তবে প্রশাসনের অনুমতি নেওয়া হয়েছে কিনা, সেটা তারা জানেন না।

স্থানীয়রা জানান, কোরবানির পশুর হাট বসানোর সময় সোনারগাঁ সরকারি কলেজ বন্ধ রাখা হয়। এতে শিক্ষার্থীদের পড়াশোনায় বিঘ্ন ঘটে। হাটের সময় শেষ হলে কোরবানির পশুর বর্জ্যে পরিবেশও দূষিত হয়। ওই সময় দুর্গন্ধে কলেজের আশপাশের সড়কে মানুষজন চলাচল করতে পারে না।

স্থানীয়দের অভিযোগ, মোগরাপাড়া ইউনিয়নের শতাধিক প্রভাবশালী আওয়ামী লীগ নেতা এ হাট বসিয়ে থাকেন। তাদের মধ্য থেকে নামমাত্র মূল্যে দুই থেকে তিনজন ইজারায় অংশ নেন। এ হাটের ইজারায় অন্য কাউকে অংশ নিতে দেওয়া হয় না। ভয়ভীতি দেখিয়ে অন্যদের সরিয়ে রাখা হয়।
পশুর হাটের সিন্ডিকেটের প্রধান সাইফুল ইসলাম বাবু জানান, এখন পর্যন্ত হাটের ইজারা হয়নি। ইজারা বিজ্ঞপ্তি দিলে হাটের ইজারায় অংশ নেবেন। তবে তিনিই ইজারা পাবেন বলে নিশ্চিত করেন।

সোনারগাঁ সরকারি কলেজের অধ্যক্ষ আশরাফুজ্জামান অপু বলেন, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে কোনো পশুর হাট বসানোর অনুমতি থাকে না। প্রশাসন কীভাবে অনুমতি দেয়, তাঁর জানা নেই। হাট চলাকালে এ শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের বিদ্যুৎ ব্যবহার করা হয়। তবে পরে বিদ্যুৎ ব্যবহারের টাকা পরিশোধ ও মাঠ নষ্ট হলে মেরামত করে দেওয়া হয়।

সোনারগাঁ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার কার্যালয়ের প্রশাসনিক কর্মকর্তা রাশেদুল ইসলাম বলেন, কোরবানির পশুর হাট ইজারা দেওয়ার বিষয়ে এখনও জেলা প্রশাসনের অনুমতি পাওয়া যায়নি। আগামী মঙ্গলবার অনুমতি পেলে ইজারার জন্য শিডিউল বিক্রি শুরু করা হবে। ইজারার আগে কেউ হাটের প্রস্তুতি নিলে এটা অবৈধ হিসেবে গণ্য হবে।

সোনারগাঁ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা আব্দুল্লাহ আল মাহফুজ বলেন, মোগরাপাড়া ইউনিয়ন থেকে পশুর হাটের অনুমতির জন্য আবেদন এসেছে। সেটা জেলা প্রশাসনে পাঠিয়েছি। অনুমতি পেলেই শিডিউল বিক্রি করা হবে। এর আগে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের মাঠে পশুর হাট বসানো বেআইনি। বিষয়টি খতিয়ে দেখা হচ্ছে বলে জানান তিনি।

By admin

Related Post

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *