বৃহঃ. নভে ১৪, ২০২৪

নাসিক সাবেক মেয়র আইভীর দেশত্যাগে নিষেধাজ্ঞা

নারায়ণগঞ্জ সিটি করপোরেশনের সাবেক মেয়র ও জেলা আওয়ামী লীগের সিনিয়র সহ সভাপতি ডা. সেলিনা হায়াৎ আইভীর বিদেশ গমনে নিষেধাজ্ঞা দেওয়া হয়েছে। দুর্নীতি দমন কমিশনের (দুদক) উপপরিচালক মোহাম্মদ নেয়ামুল আহসান গাজীর আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে মহানগর স্পেশাল জজ আদালত থেকে ওই আদেশ দেওয়া হয়েছে।

বুধবার (১৩ নভেম্বর) দুদকের জনসংযোগ কর্মকর্তা আকতারুল ইসলাম বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন।

জানা গেছে, গত ১০ নভেম্বর রোববার ঢাকা মহানগর সিনিয়র স্পেশাল জজ মো. জাকির হোসেনের আদালত এই নির্দেশনা জারি করে। এর আগে দুর্নীতির মামলায় তদন্তের স্বার্থে দুর্নীতি দমন কমিশনের (দুদক) দুদকের উপ-পরিচালক ও জনসংযোগ কর্মকর্তা মো. আকতারুল ইসলাম এ তথ্য নিশ্চিত করে গণমাধ্যমকে জানান, সেলিনা হায়াৎ আইভী সিটি মেয়র হিসেবে নির্বাচিত হওয়ার পর ব্যক্তিগত সহকারী হিসেবে আবুল হোসেনকে নিয়োগ দেন। এই আবুল হোসেন ক্ষমতার অপব্যবহার করে ভয়ভীতি দেখিয়ে সিএনজি চালিত অটোরিকশা, ব্যাটারি চালিত অটোরিকশা থেকে চাঁদাবাজির মাধ্যমে কোটি কোটি টাকা হাতিয়ে নিয়েছে। আইভীর নিজ নামে নারায়ণগঞ্জ মহানগরে রয়েছে চার-পাঁচটি ফ্ল্যাট। তার ব্যক্তিগত সহকারী আরিফ হোসেনকে সংশ্লিষ্ট পদে পদায়ন না করে একটি বিদ্যালয়ের শিক্ষক হিসেবে পদায়ন করা হয়। আইভীর গাড়ি চালকের নামে নারায়ণগঞ্জ মহানগরের বরফ কল এবং পানির কল এলাকায় দুটি ফ্ল্যাট রয়েছে। তার অনুসারীদের নাম মাত্র মূল্যে সিটি করপোরেশনের অর্থায়নে নির্মিত বহুতল ভবনে ফ্ল্যাট বরাদ্দ দিয়ে কোটি কোটি টাকার ক্ষতি করেছেন। নারায়ণগঞ্জ সিটি করপোরেশনে সিদ্ধিরগঞ্জ অঞ্চলে কঠিন বর্জ্য সংগ্রহ এবং অপসারণ ব্যবস্থাপনা প্রকল্পে প্রতি বছর কোটি কোটি টাকা লোপাট করেছেন আইভীর দুই ভাই আলী রেজা রিপন এবং আহম্মদ আলী রেজা উজ্জ্বল। নারায়ণগঞ্জে সাততলা বিশিষ্ট এক বিশাল বাড়ি, নারায়ণগঞ্জ জেলার ঐতিহ্যবাহী চিত্ত বিনোদন ক্লাব ভেঙে সেখানে একটি মার্কেট নির্মাণ করেন আইভী। বাংলাদেশ রেলওয়ের ১৮ একর জমি দখল করে সেখানে শেখ রাসেল পার্ক নির্মাণ করেন।

এই কর্মকর্তা আরও জানান, এসব সম্পদ ও দুর্নীতি ছাড়া তার নামে, তার ওপর নির্ভরশীল ব্যক্তি ও নিকটাত্মীয়দের নামে আরও অবৈধভাবে অর্জিত জ্ঞাত-আয় বহির্ভূত সম্পদ রয়েছে বলে দুদকের অনুসন্ধানে প্রাথমিকভাবে প্রমাণিত হয়েছে। এ কারণে তার দুর্নীতির প্রকাশ্য অনুসন্ধানের জন্য কমিশন সিদ্ধান্ত নিয়েছে দুদক।

প্রসঙ্গত ডা. সেলিনা হায়াৎ আইভীর জন্ম ১৯৬৬ সালের ৫ জুন। তার বাবা আলী আহাম্মদ চুনকা ছিলেন মুক্তিযুদ্ধের অন্যতম সংগঠক, নারায়ণগঞ্জ পৌরসভার চেয়ারম্যান ও জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি। ১৯৮৪ সালে তিনি নারায়ণগঞ্জের একটি ওয়ার্ড কমিটির সদস্য হিসেবে অন্তর্ভুক্ত হন। এর পরের বছরই মারা যান তার বাবা আলী আহাম্মদ চুনকা। আইভী রাশিয়ার ওডেসা পিরাগোব মেডিকেল ইনস্টিটিউট থেকে চিকিৎসা বিজ্ঞানে ডক্টর অব মেডিসিন ডিগ্রি লাভ করেন ১৯৯২ সালে। এরপর দেশে ফিরে নারায়ণগঞ্জ শহর আওয়ামী লীগের স্বাস্থ্য ও পরিবেশ সম্পাদিকার দায়িত্ব পান ১৯৯৩ সালে।  শিক্ষাজীবন শেষ করে ১৯৯৩-৯৪ সালে ঢাকা মিটফোর্ড হাসপাতালে এবং ১৯৯৪-৯৫ সালে নারায়ণগঞ্জ ২০০ শয্যাবিশিষ্ট হাসপাতালে অনারারি চিকিৎসক হিসেবে কাজ করেন। এর ১০ বছর পর (২০০৩ সালে) হন নারায়ণগঞ্জ শহর আওয়ামী লীগের সহ-সভাপতি। ওই বছরেই চার দলীয় জোট সরকারের আমলে প্রথম নারায়ণগঞ্জ পৌরসভার চেয়ারম্যান নির্বাচিত হন তিনি। এরপর দুই মেয়াদে টানা আট বছর ছিলেন সে পদে। ২০১১ সালে নারায়ণগঞ্জকে সিটি করপোরেশন করা হয়। নারায়ণগঞ্জ সিটির প্রথম নির্বাচনে তার দল আওয়ামী লীগ অবশ্য তাকে মনোনয়ন দেয়নি। তবে এতে তিনি নির্বাচন থেকে সরে না গিয়ে মেয়র পদে নির্বাচন করেন স্বতন্ত্র হিসেবে। স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবেই তিনি সাবেক সংসদ সদস্য শামীম ওসমানকে লক্ষাধিক ভোটে পরাজিত করে জয়ী হন। এরপর সিটির দ্বিতীয় নির্বাচনে (২০১৬ সালে) দলের মনোনয়ন নিয়ে ফের মেয়র নির্বাচিত হন। শেষ ২০২২ সালে ফের নাসিক সিটি করপোরেশনের মেয়র নির্বাচিত হন। 

গত ৫ আগস্ট শেখ হাসিনা সরকার পতনের পর গত ১৯ আগস্ট স্থানীয় সরকার বিভাগের উপসচিব মোহাম্মদ শামছুল ইসলাম স্বাক্ষরিত প্রজ্ঞাপনে নারায়ণগঞ্জসহ দেশের ১২ টি সিটি কর্পোরেশনের মেয়রকে অপসারণের সিদ্ধান্ত হয়। ওই দিন বিকালেই নারায়ণগঞ্জের নগর ভবন থেকে আনুষ্ঠানিক বিদায় নেন সেলিনা হায়াৎ আইভী।

By admin

Related Post

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *